১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি রাজাপুর ছাড়াও আশপাশের ভান্ডারিয়া, কাউখালি ও কাঁঠালিয়ার রোগীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র। উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। টিকেট কাউন্টারে ও ডাক্তার কক্ষে লেগে থাকে দীর্ঘ লাইন। প্রতিনিয়ত গড়ে ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকেন।
এত রোগীর চাপ সামাল দিতে ১৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কেউই নেই। শুধুমাত্র ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. তমাল হালদার বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাঁকে সহায়তা করছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের মাহামুদ রাসেল এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক মো. হাসিবুল হোসাইন। এই তিনজনই মিলে হাসপাতাল চালাচ্ছেন সীমিত সক্ষমতায়।
চিকিৎসক সংকট এতটাই চরম যে, জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা। এতে সাধারণ রোগীরা যেমন কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তেমনি জটিল রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা একেবারেই অনুপস্থিত। বর্তমানে সিনিয়র কনসালট্যান্ট আছেন মাত্র দুজন। গাইনী বিভাগে একজন মাত্র জুনিয়র কনসালট্যান্ট অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দেখছেন, কিন্তু একা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলে প্রসূতি ও নবজাতক সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকলেও গত ছয় বছর ধরে সেটি অকেজো। কারণ, টেকনোলজিস্ট না থাকায় মেশিনটি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রোগীরা ১৫০ টাকার সরকারি ফি দিয়ে এক্স-রে করাতে না পেরে বাইরের ডায়াগনস্টিকে গিয়ে ৩০০-৩৫০ টাকা গুনছেন।
চারটি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন একজন, হাসান হাফিজুর রহমান। তার নিয়োগের পর দেড় বছর ধরে কিছু রক্ত পরীক্ষা চালু থাকলেও, কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইড পরীক্ষার জন্য এখনো পর্যাপ্ত কেমিক্যাল নেই। এসব পরীক্ষাও রোগীদের বাইরে গিয়ে করাতে হচ্ছে, বাড়ছে খরচ ও সময়।
হাসপাতালে আধুনিক আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও, চালানোর মতো দক্ষ জনবল না থাকায় তা দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবহৃত। এতে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা সময়মতো স্ক্যান করাতে পারছেন না।
তবে হাসপাতালের নিচতলায় একটি ডায়াবেটিক কর্নার রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ইনসুলিনসহ ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এটিই নিয়মিত সেবা পাওয়া একমাত্র বিভাগ।
অনেকে অনেক দূর থেকে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে বসে থাকেন চিকিৎসকের জন্য।
জনবল সংকট, যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যত অচল। “একজন ডাক্তার ও দুই সহকারীর কাঁধে ৫০ শয্যার হাসপাতাল দীর্ঘ সময় চালানো যায় না”—এমন মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা। ফলে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে জেলা বা বিভাগীয় শহরে ছুটছেন, বাড়ছে দুর্ভোগ ও খরচ। দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি সচলের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।