জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল সারা রাত থেমে থেমে হামলা করা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালের দিকে পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত হয় বলে জানা যায়। গতকাল রাতে আহত শিক্ষার্থীদের সাভারের এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখা হয়েছে। হামলার সময় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড আওলাদ হোসেন ও দৈনিক যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোসাদ্দেকুর রহমান ও স্থানীয় একজন সংবাদকর্মীসহ দুইজন আহত হয়েছেন।
জানা যায়, গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ১২টার দিকে জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের দেড়শতাধিক নেতাকর্মী বহিরাগতদের সাথে নিয়ে এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সকল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগকে পিছু হটালেও এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এরপর পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতির বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এরপর শিক্ষার্থীরা জানান, রাত সোয়া ৩টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলা করেছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা, এরপরে দেড় হাজারের মতো শিক্ষার্থী এসে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করে। অপরদিকে পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু সাংবাদিক আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও বেধড়ক মারধর করে। এরপরে পুলিশ নিয়ে আসে জলকামান। পুলিশ কমপক্ষে অর্ধশত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। যার কারণে আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাহির থেকে একশত জন শুটার নিয়ে এসেছিল। তাদের হাতে পিস্তলসহ অন্যান্য অস্ত্র ছিল। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সামনে রেখে হামলা চালায়। হামলা থেকে বাঁচার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। এমন সময় তাদের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রথমে আক্রমণের শিকার হলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগদের ধাওয়া করেন।
এর আগে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, “গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসে ছাত্র নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচারসহ কোটা সংস্কারের এক দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এনে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল, লাঠি ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
প্রায় ২০ মিনিট সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবিরসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা উপস্থিত হলে আন্দোলনকারী ও হামলাকারীরা ছন্নছড়া হয়ে দুইদিকে চলে যায়। এর কিছু সময় পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড় হয়ে আবার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। এসময় দুই গ্রপের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।”
গতকাল রাত সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক ছেড়ে রাস্তায় চলে যান। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে তারা ফটক ভেঙে বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমা ছোড়ে এবং প্রধান ফটকের লাইটসহ আরও কয়েকটি লাইট ভাঙচুর করে। এরপর তারা আন্দোলনকারীদের মারধর করেন। জানা গেছে, এ সময় উপাচার্য বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন।
ওই সময় এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জাবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহের হোসেন লিখেছেন, “ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকেছে। ছাত্রছাত্রীরা ভয় পেয়ে ভিসির বাংলোতে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি নিরাপত্তা বিধানের জন্য। যাই হোক না কেনো, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করতেই হবে।”
অতপর, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফী বলেন, “আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। তবে সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে আমরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারোর কোনো বক্তব্য পাইনি।”