আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন, রাত জাগার ফলে সারাদিন ক্লান্তি, বিরক্তি বা মিষ্টি খাবার খেতে প্রবল ইচ্ছা হয়? গবেষণা বলছে, এটি কেবল ক্লান্তির কারণই নয়, বরং এটি আপনার ব্লাড সুগারের ভারসাম্যও নষ্ট করতে পারে।
সম্প্রতি চীনের ওয়েস্টলেক ল্যাবরেটরি অফ লাইফ সায়েন্সেস অ্যান্ড বায়োমেডিসিন পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এবং অনিয়মিত শোওয়ার অভ্যাস রক্তে শর্করার ওঠানামার মূল কারণ হতে পারে, যা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন বিপাকীয় (মেটাবলিক) সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
ঘুম ও রক্তে শর্করার সম্পর্ক
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য, তবে গবেষকরা নতুন করে দেখিয়েছেন, কতক্ষণ ঘুমাচ্ছেন এবং কখন ঘুমাতে যাচ্ছেন—এ দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে শরীর কীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
গুয়াংঝো নিউট্রিশন অ্যান্ড হেলথ স্টাডি-এর অংশ হিসেবে ৪৬ থেকে ৮৩ বছর বয়সী ১,১০০ জনের ঘুমের সময়সীমা ও রক্তে শর্করার ওঠানামার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, যারা কম ঘুমান বা দেরি করে ঘুমান, তাদের শরীরে রক্তে শর্করার তারতম্য বেশি দেখা গেছে।
কতটুকু ঘুম প্রয়োজন?
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল:
- গুরুতর ঘুমের অভাব: ৪ থেকে ৪.৭ ঘণ্টা
- মাঝারি ঘুমের অভাব: ৫.৫ থেকে ৬ ঘণ্টা
- সামান্য ঘুমের অভাব: ৬.৮ থেকে ৭.২ ঘণ্টা
- যথেষ্ট ঘুম: ৮ থেকে ৮.৪ ঘণ্টা
সবচেয়ে কম ঘুমানো ব্যক্তিরাই রক্তে শর্করার বড় ওঠানামার শিকার হয়েছেন। এমনকি যারা ৫.৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমান, তাদের মধ্যেও শর্করার তারতম্য দেখা গেছে।
দুশ্চিন্তার কারণ কী?
রক্তে শর্করার ওঠানামা শুধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিন্তার বিষয় নয়—এটি সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়ন্ত্রিত রক্তে শর্করা ক্লান্তি, ক্ষুধা বৃদ্ধি এবং বিপাকীয় সমস্যার কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের জন্য দৈনিক ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের জন্য ৩৬ গ্রাম পর্যন্ত চিনি গ্রহণ করা নিরাপদ।
রক্তে শর্করা স্থিতিশীল রাখতে ঘুমের ৫টি অভ্যাস
১. ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন – এটি শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও বিপাকীয় কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য।
২. নিয়মিত সময়ে ঘুমাতে যান – প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে (সার্কাডিয়ান রিদম) ঠিক রাখে।
৩. শোবার আগে মোবাইল বা টিভি এড়িয়ে চলুন – ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত করে, যা ঘুমাতে দেরি করায়।
৪. রাতের খাবার দেরিতে খাবেন না – শোবার আগে বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৫. সকালে রোদে বের হোন – সূর্যের আলো শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক রাখে, যা রাতে ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।
শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়ামের ওপর জোর দিলেই হবে না, বরং ঘুমের অভ্যাসও ঠিক রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত শোবার সময় মানলেই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে এবং বিপাকীয় জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তাই, দেরি করে রাত জাগার বদলে একবার ভাবুন—আপনার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ঘুমটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় সমাধান!