রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টারের প্রায় ৪৪ শতাংশ ফাঁকা পড়ে আছে। সংখ্যার হিসেবে যেটি ১২৪। শিক্ষকদের অনীহাকে অন্যতম কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষকদের দাবি তুলনামূলক বেশি অর্থ দিতে হয় এসব কোয়ার্টারে, সুবিধার তুলনায় যেটির পরিমাণ অনেক বেশি। একই ভাড়ায় বাইরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধাসহ ভালো বাসা পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারগুলো প্রকৌশল দপ্তরের আওতাধীন। প্রকৌশল সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য মোট কোয়ার্টারের সংখ্যা ২৮৫ টি। এসব কোয়ার্টারের জন্য শিক্ষকদের গুনতে হয় একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী প্রভাষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ এবং অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষকদের ৩৫ শতাংশ বাসা ভাড়া বাবদ দিতে হয়। টাকার অঙ্কে যেটি ১৫- ৩০ হাজার।
প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারগুলোতে বাসা ভাড়া বাবদ যেই অর্থ দিতে হয় সেটি অনেকটাই বেশি। সমপরিমাণ টাকায় রাজশাহী নগরীতে ভালো সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাসা পাওয়া যায়। এ জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা কোয়ার্টারে থাকতে চান না। এছাড়াও অগ্রনী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখা থেকে সহজ লভ্যাংশে ঋণ নিয়ে শিক্ষকরা নিজস্ব বাড়ি করার দিকে ঝুঁকছেন। কোয়ার্টারে যে টাকায় তারা থাকবে সে টাকায় তারা ঋণ পরিশোধ করে এবং চার থেকে পাঁচ বছর পর তাদের নিজস্ব বাড়ি করে ফেলে।
এছাড়াও বর্তমানে শিক্ষকদের ছেলেমেয়েদের শহরের দিকে লেখাপড়ার সুবিধাজনক কারণে সবাই শহরের দিকে ঝুঁকছেন । যাতায়াত সুবিধা, নিজস্ব গাড়িসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে থাকতে চাচ্ছেনা বলে ধারণা করেন তিনি।
এবিষয়ে কথা শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের সাথে কথা হয় । তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য বরাদ্দকৃত আবাসিক কোয়ার্টার গুলোতে যে পরিমাণ ভাড়া বা অর্থ প্রদান করতে হয় তা অনেক বেশি। এছাড়াও শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত আবাসিক কোয়ার্টার গুলো নিম্নমানের ও পুরাতন ৷ বাড়িগুলো দেখতে সুন্দর হলেও ভেতরে ততটা আরামদায়কও নয় । পাশাপাশি বাড়িগুলোতে কিছুটা বড় পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজন আসলে জায়গা সংকুলান নিয়ে একধরনের জটিলতায় পড়তে হয়।
কোয়ার্টারগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি বাহিরের সাথে তুলনা করি তাহলে বলা যায় মোটামুটি ভালো। তবে কোয়ার্টারগুলোতে যেই ধরনের নিরাপত্তা থাকা দরকার তা নেই।
এবিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে রাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এটা নিয়ে ভাবনার চেয়ে দুর্ভাবনাই বেশি ৷ এই বাসা গুলোতে থাকতে অনেক শিক্ষকরাই আগ্রহী না। তাছাড়া যারা এই বাসাগুলো নিচ্ছে তাদের যে খরচ হচ্ছে সেটাও অনেক বেশি। তারা যে টাকা দিয়ে এখানে থাকতে হয় তা দিয়ে রাজশাহী শহরে ভালো বাসায় থাকা যায়। এছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক থেকে শিক্ষকদের সহজ ও কম হারে ঋণ নেওয়ার ফলে তারা নিজেরাই বাসা করে ফেলছে। এসব অনেক বিষয়েই শিক্ষকরা এসব বাসাগুলোতে থাকতে অনাগ্রহী।
এবিষয়ে কোনো বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে তিনি বলেন, বাসাগুলো ফাঁকা থাকাতে বিশ্ববিদ্যালয় একটা বৃহৎ অর্থ হারাচ্ছে তা নিয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বসা না হলেও অনানুষ্ঠানিক পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।