আজ তিন নভেম্বর! জেল হত্যা দিবস! জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসন ভবনের নাম ছিল!’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন’র নাম ফলকের ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল’ অংশটুকু ভেঙে তুলে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের ভিন্ন মতামত ।
বিষয়টি নিয়ে সচেতন নাগরিকসমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মতামত তুলে ধরেছে।
রাবির ১৯৬৬ ব্যাচের এক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে লিখেছেন, আমি গত ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে ছবি তোলার সময় দেখি ভবনের নাম থেকে তিনটি শব্দ মুছে ফেলে “ ইসলাম প্রশাসন ভবন”লেখা রয়েছে। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি “ শহীদ সৈয়দ নজরল “ শব্দ তিনটি মুছে ফেলা হয়েছে।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী যে চারজন জাতীয় নেতাকে ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাঁদের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন।
প্রশাসন ভবনের নাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামের প্রথম তিনটি শব্দ মুছে ফেলা দেখে আমি ব্যথিত হই ।বর্তমানে ভবনের নাম “ ইসলাম প্রশাসন ভবন “। তিনটি শব্দ মুছে ফেলার সময় শুধু “ ইসলাম” শব্দটি রাখা যৌক্তিক মনে হয়নি।ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেই পারবেনা কোন ইসলামের নামে ভবনের নাম করণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন’ নামের ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল’ অংশটুকু তুলে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম ফলক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামের নাম ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্টেডিয়ামের নাম শেখ কামালের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু জনসংযোগ দপ্তর বলছে নাম পরিবর্তনের কোনো মিটিং হয়নি।
এ বিষয়ে রাকসু আন্দোলনের সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আওয়ামী রেজিমের এককেন্দ্রিক মুক্তিযুদ্ধের বয়ানের বিরুদ্ধে মানুষ তার উষ্মা প্রকাশ করে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে এবং বিভিন্ন স্মৃতিফলক বিনষ্টের মধ্যে দিয়ে। এ ক্ষোভ হাসিনা রেজিমের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে যেখানে ভাসানী, জাতীয় চারনেতা এবং অন্যসব ক্ষণজন্মাদের প্রতিদান উপেক্ষিত রাখা হয়েছিল। রাবির প্রশাসন ভবনের নামফলক ভাঙার বিষয়টা ইচ্ছাকৃত নাকি কারিগরি ত্রুটি সেটা পরিষ্কার হওয়া জরুরি। জুলাই বিপ্লবের পরে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেওয়া সব নেতার প্রতি প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হবে সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। ঐকমত্যের বাংলাদেশে পৌঁছাতে চাইলে এধরনের কাঠামোগত বিচ্যুতিকে কাটিয়ে উঠতে হবে। এমনকি আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক এবং প্রতিকৃতি পুনঃনির্মাণের পক্ষে।’
এবিষয়ে রাবি উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। যদি তা করে থাকে তাহলে আমরা মিটিং করে বিষয়টি সমাধান করবো।
জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। কিন্তু এবিষয়ে প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা এসব নিয়ে মিটিং করবো তখন এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নাম পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, নাম পরিবর্তন হবে কিনা এটা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। ঐ মিটিংয়েই এসব সকল বিষয় উত্থাপিত হবে।