যৌন হয়রানি, অর্থ কেলেঙ্কারি ও গণহত্যায় সমর্থনসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এর অধ্যাপক ড. মুস্তাক আহমেদ এর পদত্যাগের দাবিতে রেজিস্ট্রার বরাবর দরখাস্ত জমা দিয়েছে বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীরা।
রবিবার(১সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদনপত্র জমা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট এর চেয়ারম্যানের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরেন তারা।
তারা বলেন, আমরা জুলাই-আগস্ট মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দেশব্যাপী ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামে যার-যার অবস্থান থেকে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিলাম। এই আন্দোলন চলাকালীন আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের বিপক্ষে একের পর এক বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও অনৈতিক ভাষায় পোস্ট দিতে থাকেন, যা শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন দমনে সরকারের পৈশাচিক গণহত্যাকে সমর্থন করে এবং উস্কে দেয়। এছাড়া একাডেমিক পরিসরে নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অপমান-অপদস্ত করা, পরীক্ষায় খাতায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, হুমকি- ধামকি দেওয়া, বিভাগের অর্থ তছরুফ করা ও নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ করা, টার্গেট করে অপছন্দের শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়াসহ তার নানা অপকর্মে ও অত্যাচারে আমাদের শিক্ষাজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
তারা তার অপকর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। যেমন:
ছাত্র-জনতার গণহত্যায় সমর্থন ও উস্কানি : আন্দোলন চলাকালীন তিনি তার ফেসবুকে এক পোস্ট এ লিখেন, যারা নিজেদের ‘রাজাকার’ আলবদর দাবী করতে পারে, ‘আমি কে রাজাকার, তুমি কে রাজাকার’ বুলি আওড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তাপ ছড়াতে পারে, তাকে/তাদেরকে পড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হইনি। আমার পেছনে রাষ্ট্র বিনিয়োগ করেছে, এই পর্যায়ে আসতে।
তাছাড়াও তিনি ১৭ জুলাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে নৃশংস হামলা চালায়। সেই হামলাকে সমর্থন ও উস্কে দিয়ে তিনি ফেসবুক পোস্টে উল্লাসিত হয়ে লিখেন, ‘অপারেশন চলছে। কাটাছেঁড়া। যাকে বলে ব্যবচ্ছেদ। এক একটি কনুই ব্যাংকের (ব্যাঙ। ব্যবচ্ছেদ করে বিভিন্ন অংশ দেখার কাজ চলছে। একটু দূরে থাকুন।।’
একাডেমিক পরিসরে দুর্নীতি: একটা সেমিস্টারে ন্যূনতম যে কয়টি ক্লাস নিতে হয়, তিনি তার ধারেকাছেও না গিয়ে সর্বসাকুল্যে পাঁচ থেকে সাতটি ক্লাস নিয়ে কোর্স সমাপ্ত করেন। এটা তার দীর্ঘদিনের অনুসৃত রীতি ও পদ্ধতি। এই ক্লাসগুলোও তিনি রুটিন না মেনে তার দেওয়া নির্ধারিত সময়ে নিয়ে থাকেন। তার নির্ধারিত সময়ে ক্লাস করতে এসেও আমাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর উনি যে ক্লাস নেন তার সর্বোচ্চ সময়সীমা হতো ২০ থেকে ২৫ মিনিট। এমনও নজির রয়েছে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসিয়ে রেখে উনি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন।
ক্লাসে অনিয়মের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে খাতা পক্ষপাতমূলক মূল্যায়নের অভিযোগ রয়েছে। একজন শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বাইরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু এর ভিত্তিতে তিনি তার অনুগামী ও মোসাহেব শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেন এবং তাদের মাধ্যমে পুরো ব্যাচে নজরদারি চালান। সেই নজরদারি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করেন। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী তার আক্রোশের শিকার হন এবং প্রাপ্য নম্বরের ক্ষেত্রে বঞ্চিতও হন। ক্লাসে তিনি হরহামেশাই বলেন, ‘পরীক্ষার নম্বর খাতায় থাকে না, মাথায় থাকে’। এটা তার বিখ্যাত উক্তি হিসেবে বিভাগে সর্বজন বিদিত।
নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি : তিনি বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে রাতবিরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ) মেসেজ করেন। যা সেই শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর।
বিভাগের ফান্ড হতে অর্থ আত্মসাৎ : আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে যে, মুসতাক আহমেদ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব (৫ মে ২০২১-৪ মে ২০২৪) পালনের সময় বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে ৯ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা তছরুফ করেছেন। বিভাগের সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পর তার এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে। বিষয়টি অবগত করে নতুন সভাপতি রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও আমরা অবগত হয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি এ টাকা বিভাগের তহবিলে জমা দিবেন মর্মে অঙ্গীকার করে বিষয়টি ফয়সালা করলেও এখনো সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেননি। তার মানে তিনি ভয়াবহ আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও আইনবহির্ভূত।
অছাত্র ও সন্ত্রাসীকে ছাত্রলীগের নেতা বানাতে জালিয়াতি : ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামের জরুরি সভায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব এর ভর্তি বাতিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরেও প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদ তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে তাকে ছাত্রলীগের সম্মেলনের ঠিক আগের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ পেছনের তারিখ (২৪ আগস্ট ২০২৩) দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যামে ছাত্রত্বের প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। এবং অছাত্র ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দিতে সহায়তা করেন। সভাপতি থাকাকালীন তার ক্ষমতার এই অপব্যবহার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে।
এসব অভিযোগ উঠার পর অভিযুক্ত মুস্তাক আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়।
দীন