বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আড়াই মাস পর ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, রিজার্ভ বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করা। পাশাপাশি রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে এবং ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকেও রিজার্ভ সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে, যার ফলে রিজার্ভ আর কমবে না এবং ধীরে ধীরে বাড়বে।
তিনি ব্যাংক খাতের সংস্কারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে জানান, এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, যা ব্যাংক খাতকে একক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করেছে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা প্রতিটি ব্যাংকের প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ করবে এবং সেই অনুযায়ী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
গভর্নর ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ‘ক্ষতি অনেক গভীর, তবে তা পুনরুদ্ধার সম্ভব। এটি যেমন একদিনে হয়নি, তেমনি ঠিক করতেও সময় লাগবে।’ সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর তারল্য সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে এবং ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে যেন তারা একসঙ্গে তাদের আমানত তুলে না নেন।
ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তবে আগে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত পরিস্থিতি যাচাই করতে আন্তর্জাতিক মানের অডিটর নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে এবং ব্যাংকগুলোর অডিটে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
এছাড়া ব্যাংকের টাকা লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠিত হচ্ছে, যা সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করবে।
ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে গভর্নর জানান, গ্রাহকের আস্থা কিছুটা ফিরে এসেছে এবং ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে বাইরে চলে যাওয়া ৭০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ফিরে এসেছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগ্রহে গত ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আজ তার দায়িত্ব গ্রহণের এক মাস পূর্ণ হলো।