শহীদ বুদ্ধিজীবী মীর আব্দুল কাইয়ূমের ৫২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মীর আব্দুল কাইয়ুমের স্মরণে ‘২৫ মিনিটের ব্যতিক্রমী স্মরণপর্ব’ আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূম ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরি কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা, অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ূমকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ওইদিন রাত ৯টায় এ বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পদ্মার পাড়ে বাবলাবনের বালুর নীচে তাকে আরও অনেকের সঙ্গে মাটিতে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।
‘২৫ মিনিটের ব্যতিক্রমী স্মরণপর্ব’ আয়োজনের মধ্যে ছিল, তাঁর মৃত্যুর মাস নভেম্বর ১১ তম মাস হওয়ায় ১১টি স্মৃতিশ্রদ্ধা আলোকশিখা জ্বালানো, রাত ৯টায় তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ৯টি মাটির জলপাত্রে দেয়া হয় জলপুষ্পাঞ্জলি; পালন করা হয় ১ মিনিটের নিরবতা। তাঁর চেতনা দশ দিগন্তে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শ্রেণিশ্রেষ্ঠ ১০ জনকে দেওয়া হয় ‘মীর কাইয়ূম শিশুকিশোর প্রণোদনা পুরস্কার’। এতে স্বাধীনতা-সংগ্রামের বই, কলম ও সনদপত্র জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম (বীর প্রতীক) ও অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিককে দেওয়া হয় ‘মীর কাইয়ূম বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা-২০২৩’। এরপর সংক্ষিপ্ত অনুভূতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে ২৫ মিনিটের আয়োজন শেষ হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় মূখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, শহীদ কাইয়ুম ১৯৬০-৬২ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র ছিলেন। ওই সময় তিনিও বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তারা দুজনই একসঙ্গে শিক্ষকতায় যোগ দেন। সেখান থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত একসাথে কাজ করেছেন। ১৯৬০-৭০ সালের সময়ে দেশের যে রাজনৈতিক বিভাজন, সেটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এখনকার মতো ছিল না। তিনি বলেন, শহীদ কাইয়ূমের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের পতাকা ও স্বাধীনতা পেয়েছি। আজকের এই দিনে শহীদ কাইয়ূমের কথা বলতে যেয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে যান।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শহীদ জায়া অধ্যাপক মাসতুরা খানম বলেন, আমি বেদনার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি। আমার কাছে বেদনার স্মৃতিই হলো অহংকার। আমার এই স্মৃতি প্রেরণার উৎস। শহীদ মীর কাইয়ূম সবার কাছে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। দেশের জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি শহীদ কাইয়ূমের প্রতিও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি।
প্রধান অতিথি হিসেবে সহ-উপাচার্য হুমায়ুন কবীর বলেন, দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বুদ্ধিজীবী সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যাঁরা সমাজের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে নিজেদের মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যান তাঁরাই বুদ্ধিজীবী। একজন মানুষের মাথা কেটে দিলে যেমন কিছু থাকে না, তেমনি আমাদের মাথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে পঙ্গু করার চক্রান্ত করা হয়েছিল। যাদের জন্য ভাষা ও স্বাধীনতা পেয়েছেন তাঁদের কথা তরুণ প্রজন্মকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদা সরকার নিরা ও উম্মে হাবীবা অনন্যার সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আঞ্জুমান শিরীন ও শহীদের জীবনালেখ্য পাঠ করেন অধ্যাপক নূর-ই-আলম সিদ্দিকী। শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূমের কন্যা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়ার সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমদ খানকে মরণোত্তর শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূম সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন সাংবাদিক সফি উদ্দিন আহমদ, ওয়ালিউর রহমান বাবু, অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক প্রমুখ।
মীর কাদির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়