পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি)। একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর ১০ বছরে দুইজন শিক্ষাবিদকে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১ম উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত অধ্যাপক ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার।
গত ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ দাবি করেন। আন্দোলনের তোপের মুখে গত ১৮ আগস্ট রাতে তিনি পদত্যাগ করেন।
তিনি চলে যাওয়ায় রাবিপ্রবি পরিবারে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কে হচ্ছেন আগামীতে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার। অভিভাবক হিসেবে কেমন উপাচার্য চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?
শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মোঃ আয়নুল ইসলাম-
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ক্যামিলি চাকমা বলেন, ” আমি ক্যাম্পাসে এমন একজন ভাইস চ্যান্সেলরের প্রত্যাশা করি, যিনি হবেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক। তাঁর নেতৃত্বে শিক্ষার পরিবেশ হবে সহনশীল ও সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন। সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি পক্ষপাতিত্ব থেকে বিরত থাকবেন এবং সকলের উন্নতির প্রতি মনোনিবেশ করবেন। ক্যাম্পাসের অগ্রগতি এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবেন।”
ট্যূরিজম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিপা আকতার বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবমুখী চিন্তা করবে এবং শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে থাকবে এমন একজন উপাচার্য এখন সময়ের দাবি। আমরা একজন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য চাই যিনি শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ও সুনাম অর্জনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। দ্রুত নতুন একাডেমিক ভবন স্থাপন করে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের বহুমুখী সুবিধা বৃদ্ধিতে প্রথম থেকেই কাজ করে যাবেন। তাছাড়া, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা, বৃদ্ধিকরণ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ এবং নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে উত্থাপিত সকল অভিযোগ দূরীকরণের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এমন একজন উপাচার্য প্রত্যাশা করছি।”
ফিশারিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান নওরীন বলেন, আমরা এমন উপাচার্য চাই যে ক্যাম্পাসের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাত্মক উন্নয়ন নিশ্চিত ও তদারকি করবেন। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ ও যথেষ্ট যোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করবেন।
ফ্যাকাল্টি ও ডিপার্টমেন্টের উন্নতি ও প্রসারে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন। আলাদা আলাদা ল্যাব ফ্যাসিলিটিস নিশ্চিত করবেন। কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টের আসন সংখ্যা খুবই সীমিত যা বর্ধিত করার পদক্ষেপ নিবেন।ক্যাফেটেরিয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা এবং খাবারের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিবেন। লাইব্রেরিতে ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজনীয় বইয়ের যোগান দিতে হবে। একটা ক্যাম্পাসে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বির জন্য ধর্মীয় উপাসনালয় যেমন: মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি স্থাপন করার পদক্ষেপ নিবেন।
ছেলে – মেয়েদের জন্য স্থায়ী হল নির্মাণ ও হলের সব প্রয়োজনীয় ফ্যাসিলিটিস নিশ্চিত করবেন। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেক ব্যাচের জন্য আলাদা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করবেন।
ট্যুরিজম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হাসান (রাসেল) বলেন, “আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন অভিভাবক শুন্য। আমরা সামনে এমন একজন উপাচার্য হিসেবে চাই যিনি হবেন শিক্ষার্থী-বান্ধব। যিনি আমাদের অভিভাবক হয়ে আমাদের প্রাণের রাবিপ্রবিকে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মানে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। যিনি শিক্ষার্থীদের গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে,ক্লাস সংকট সমস্যা নিরসনে, ল্যাবের সুবিধা নিশ্চিত করতে, শিক্ষক সংকট কমাতে, সেশন জট ও পরিবহন সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন।যার কাছে দূর্নীতির কোনো প্রশ্রয় থাকবে না। এমন উপাচার্য আমরা চাই।”
আয়নুল ইসলাম
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি।