জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামিক স্কলারদের অন্তর্ভুক্তকরণ এবং শিক্ষার সকল স্তরে ইসলামিক স্টাডিজ কে বাধ্যতামূলক করার দাবিসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাইজুল ইসলামের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ সোসাইটি রাবি শাখার ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানান তারা৷
তাদের দাবিগুলো হলো: ১. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-র মূল কমিটিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ‘ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিভাগ’ থেকে ইসলাম শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পুস্তক প্রণয়নের জন্য ৪ জন এবং সকল স্তরে প্রণীত পুস্তকের শরয়ী বিষয়াদি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ন্যূনতম ২ জন গ্রহণযোগ্য, বিতর্কমুক্ত ও নির্ভরযোগ্য শিক্ষাবিদ এক্সপার্ট অন্তর্ভুক্ত করা। বিতর্কিত ও ভ্রান্ত-চিন্তা লালনকারী, ইসলাম বিদ্বেষী এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতাদর্শের বহির্ভূত কাউকে এ কমিটিতে রাখা যাবে না।
২. কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ সংশোধিত) প্রবিধান সংশোধন করে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাষক (আরবি, ফিক্স, কুরআন, হাদিস ও লাইব্রেরিয়ান) এবং সহকারি মৌলভী (আরবি) ও সহকারি লাইব্রেরিয়ান পদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গ্রাজুয়েটদের আবেদন করার সুযোগ পুনর্বহাল করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি।
৩. প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকের সকল স্তরে ইসলাম শিক্ষা আবশ্যিককরণ।
৪. সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু নিশ্চিতকরণ।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ, আরবি সাহিত্য, ফিকহ, কুরআন, হাদিস ইত্যাদি বিভাগ নিয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বা শরী’আ অনুষদ চালু করা।
৬. ইসলামিক স্টাডিজ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগে ইসলাম শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়কে GED এর অন্তর্ভুক্তকরণ।
মানববন্ধনে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আশরাফ উজ জামান বাংলাদেশ ইসলাম শিক্ষার ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে থেকেই আছে।
১৯২১ সালে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ৬ টি লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।তার অন্যতম একটি ছিলো ইসলাম শিক্ষা কিন্তু আমরা দেখতে পাই বৃটিশ আমলে যে ইসলাম শিক্ষা চালু হলো পরবর্তীতে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর এই ইসলাম শিক্ষা ঐ আকারে বর্ধিত হয়নি। আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশে ৫৫ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও পাকিস্তান আমলে যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ পড়ানো হয়।
তিনি আরো বলেন উচ্চ মাধ্যমিকে ইসলাম শিক্ষাকে ঐচ্ছিক করে পরিকল্পিতভাবে ইসলাম শিক্ষাকে সংকোচিত করা হয়েছে।এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে ইসলাম শিক্ষাকে পিছিয়ে রেখে মানুষকে ইসলামি ক নীতি-নৈতিকতা শেখা থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লবের সবচেয়ে বড় দাবি ছিলো আমাদের ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করে একটা সুন্দর, সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি, রাষ্ট্রের শিক্ষা যেখানে সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেই শিক্ষা ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারতেছিনা। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় দুঃখ ও দুর্দশা। আমরা সকলেই জানি পাঠ্যক্রমে হাসিনা সৈনিক সবচাইতে নির্লজ্জ, উলঙ্গ বেহায়াপনা ছিলো পাঠ্যক্রমের এলজিনিটি সমকামিতা উত্থাপন করা এবং শিক্ষা কারিকুলামের নামে স্কুল কলেজগুলোতে নৈতিকতা বিবর্জিত একটা জেনারেশন গড়ে তুলা। আমরা এর বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন গড়ে তুললেও আমরা সক্ষম হয়নি। আমরা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছি। ব্রাক ইউনিভার্সিটির আসিফ মাহতাব ট্রান্স জেন্ডারের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে চাকরি হারিয়েছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পর আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, এই স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলামের পরিবর্তনের লক্ষে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যেই শাহাবাগী চেতনাকে ধ্বংস করা ও ফ্যাসিবাদকে নির্মুল করার জন্য আন্দোলন করেছি আজ তারাই পাঠ্যকারিকুলাম কমিটি দখল করে আছে। বাংলার মুসলিম সমাজ এটা কখনোই মেনে নিবে না।
মানববন্ধনে বিভাগের অধ্যাপক বারকুল্লা বিন-দুর, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন এবং অধ্যাপক একে এম আব্দুল লতিবসহ বিভিন্ন সেশনের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।