সূত্র মোতাবেক জানা গিয়েছে ভারত চায়, শেখ হাসিনা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্য দেশে চলে যাক। কিন্তু, তা সম্ভব হয়নি। তবে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত কোনো মন্তব্য করেনি। এ ছাড়া ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা যে বিমানে করে ভারতে গিয়েছিলেন, তা উড়ে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদ সংস্থা এএনআই।
ভারতে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে আছেন। শেখ রেহানার যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব আছে। তবে শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যে যেতে হলে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হবে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে হেলিকপ্টার নিয়ে এসেছিল, সেটি ভারতের বাইরে চলে যাবে, সেই প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গেছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। হেলিকপ্টারে জ্বালানি ভরার কাজ পর্যন্ত শেষ।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সেই হেলিকপ্টার টি উড়ে যায়। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তা নজরদারি করছে বলেও জানানো হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা সেই হেলিকপ্টারে আছেন কিনা, তা জানা যায়নি।
শেখ হাসিনার ছেলে সংবামাধ্যম সজীব ওয়াজেদ জয় ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ হাসিনা কোথাও রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বলে যে খবর রটেছে, তা ঠিক নয়। তার পরিবার এখন বিশ্বের নানা জায়গায় আছে। তিনি সেখানে তার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতেই পছন্দ করবেন।’
গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে শেখ হাসিনাকে হেলিকপ্টার টি ভারতের দিল্লির কাছে অবতরণ করে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ভারত চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেখ হাসিনা অন্য দেশে চলে যাক।
কেন হাসিনাকে রাখতে চায় না ভারত, এমন প্রশ্নের জবাবে ও পি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে ভারত শেখ হাসিনাকে রাখতে চায় না। প্রথম বিষয়টি অবশ্যই তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, ভারত তার সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। আর বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। ভারত চায় না, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় ছায়াপাত করুক।’
প্রবীণ সাংবাদিক ও কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রণয় শর্মা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনা ভারতকে একটা বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ভারত চায় না, বাংলাদেশের ঘটনার অভিঘাত দেশের মধ্যে পড়ুক।’
গতকাল সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিসিএস বা ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির বৈঠক বসেছিল। সিসিএসের বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। সিসিএস হলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষ কমিটি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সকলেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে শুধু এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নয়, সোমবার সকাল থেকে একের পর এক বৈঠক হয়েছে। নানা স্তরে হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে হয়েছে। কূটনীতিকদের মধ্যে হয়েছে। নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভারতের এক্ষেত্রে একটা বড় চিন্তা রয়েছে। তা হলো, চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে। ভারতের প্রতিবেশী এই দুই দেশ এই পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা নেবে, সেটা ভারতের একটা প্রধান বিচার্য বিষয়।’
বাংলাদেশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। মঙ্গলবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থাকবেন। অন্তত এই ক্ষেত্রে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়েই চলতে চায় সরকার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ সম্পর্কে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্র যা বলবে, রাজ্য সরকার সেটাই করবে। এবং বিজেপি নেতাদের বলেছেন, যেসব পোস্ট আপনারা করেছেন সেগুলো করা উচিত নয়, এবং আর না করার কথা ও বলেছেন তিনি।