বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল, তা বাস্তব নয়। তিনি দাবি করেন, এই ভুয়া প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন না তোলার জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ের পর, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা আন্দোলনের চাপে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনীতি ও গার্মেন্টস খাতের উন্নয়ন বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়। তবে সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাকস্বাধীনতা দমন এবং ভিন্নমত দমন করার অভিযোগ করেছেন।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধসহ একাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন। বাংলাদেশ সরকার তাকে বিচারের আওতায় আনার জন্য দিল্লিকে প্রত্যর্পণের আহ্বান জানালেও, ভারত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) দাভোসে সবার সামনে বলছিলেন কীভাবে একটি দেশ পরিচালনা করতে হয়। অথচ কেউই তার কথার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। এটি একটি ভালো বৈশ্বিক ব্যবস্থা নয়।”
তিনি আরও বলেন, “তিনি দাবি করেছিলেন যে দেশের প্রবৃদ্ধি হার অন্য সব দেশের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু এটি একেবারেই মিথ্যা প্রবৃদ্ধি। এমন প্রবৃদ্ধি নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু নেই।” তবে তিনি এই প্রবৃদ্ধিকে কেন ভুয়া বলছেন, তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেননি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বার্ষিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, যা ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের সময় প্রায় ৫ শতাংশ ছিল। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং স্বাধীনতার পর থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে।