অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচি চলছে। একই ভাবে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও শিক্ষক সমিতির ব্যানারে উক্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন। পাশাপাশি আগামী সোমবার (১ জুলাই) থেকে সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি।
রবিবার (৩০ জুন) সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের নিচে ঘন্টা ব্যাপি অবস্থান কর্মসূচি পালন করে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।
উক্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান, হাবিপ্রবি প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায়সহ বিভিন্ন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ ।
উক্ত কর্মসূচিতে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান বলেন, জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে এই স্কিম তৈরি করা হয়েছে। যে শিক্ষকরা জাতি গঠনের কাজ করবে তাদের অবস্থানকে যদি আপনারা তলানিতে নিয়ে যান, তবে কী প্রজন্ম আসবে আমাদের সামনে?
এসময় তিনি আরো ঘোষণা দেন, দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। দাবি মানলে আমরা পুনরায় সকল কার্যক্রম শুরু করব।
বিকেল ৪ টার সময় সংবাদ সম্মেলনও করে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে হাবিপ্রবি শিক্ষক
সমিতি একটি বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এবং বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতির নেতারা কিছু কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলেছেন।কর্মসূচিতে তারা বলেন,
১ । এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের সকল পর্যায়ের নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। অনলাইন ক্লাস, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, সাপ্তাহিক ছুটির দিনের প্রফেসশনাল কোর্সের ক্লাসও বন্ধ থাকবে।
২। সকল ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করা হবে। মিডটার্ম, কুইজ, ক্লাশ টেস্ট গ্রহণ করা হবে না।
৩। ডিন অফিস, বিভাগীয় অফিস এর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। দাপ্তরিক সভা, একাডেমিক সভা, বিভাগীয় উন্নয়ন কমিটির সভা, প্রশ্নপত্র মডারেশন সভা বন্ধ থাকবে।
৪। সিলেকশন বোর্ডের সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, গুচ্ছসহ সকল প্রকার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি, নবীনবরণ ইত্যাদি কার্যক্রম থেকে শিক্ষকরা বিরত থাকবে।
৫। শিক্ষকগণের জন্য প্রযোজ্য সকল প্রশাসনিক অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকগণ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবে।
এদিকে পৃথক কর্মসূচি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন।
রবিবার (৩০ জুন) ঢাকায় মানববন্ধন শেষে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের কর্মকর্তা/কর্মচারি নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন সংক্রান্ত ন্যূনতম যোগ্যতার নির্দেশিকা-২০২২ প্রণয়ণ সংক্রান্ত দুটি সভায় বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন (বাআবিঅফ) এর প্রতিনিধিবৃন্দ কর্তৃক সংশোধনী এবং ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছিল এবং খসড়া চাওয়া হয়েছিল । দুটি সভাতেই ফেডারেশনকে খসড়া দেওয়ার কথা দিলেও, ফেডারেশনকে কোন খসড়া দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি/পদোন্নয়ন সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা-২০২৩, সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন বলে আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলতে হয়, সকল অংশিজনকে উপেক্ষা করে এক তরফা ভাবে অভিন্ন নীতিমালা সুপারিশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাদের যে সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম হবে? একই দেশে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম থাকতে পারে না। এটা অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আজ অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের স্বার্থে এই সকল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জোর দাবী জানাচ্ছি। এই সকল অযৌক্তিক, সাংঘর্ষিক ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচিতে যাবে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন।
কর্মসূচিতে উল্লেখ করা হয়ঃ১)১লা জুলাই ২০২৪ খ্রি. সোমবার থেকে ৪ঠা জুলাই ২০২৪ খ্রি. বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি।
২) আগামী ৭ই জুলাই ২০২৪ খ্রি. রবিবার থেকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এবং কর্মকর্তা/কর্মচারীদের এমন পৃথক কর্মসূচি ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সেশনজট এর আশংকা করছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন উদ্ভূত পরিস্থিতি দ্রুত সময়ের মাঝে সঠিকভাবে সমাধান হোক এবং আমরা দ্রুত সময়ের মাঝে যেনো ক্লাস, পরীক্ষায় ফিরতে পারি।এমনিতেই আমরা করোনার কারণে সেশনজটে আছি।এখন যদি আবার নতুন করে সেশনজট হয় তাহলে এটি আমাদের সারাজীবনের জন্য ঋণাত্মক হবে।
নাঈম ইসলাম সংগ্রাম
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়