বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পর্বতমালার নিচে বিপুল পরিমাণ সাদা হাইড্রোজেন (হোয়াইট হাইড্রোজেন) মজুদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। যদি এই বিশেষ হাইড্রোজেন উত্তোলন করা সম্ভব হয়, তাহলে তা বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে একটি টেকসই সমাধান হয়ে উঠতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য সাদা হাইড্রোজেন উৎপাদনকারী স্থানগুলো চিহ্নিত করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, পিরেনিস এবং ইউরোপীয় আল্পস পর্বতমালার নিচে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হাইড্রোজেনের মজুদ থাকতে পারে।
হাইড্রোজেন পুড়লে কেবল পানি উৎপন্ন হয়, যা একে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বিশেষত উড়োজাহাজ চলাচল ও স্টিল উৎপাদনের মতো উচ্চ-শক্তি নির্ভর শিল্পে এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
তবে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হাইড্রোজেন মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপন্ন হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সাদা হাইড্রোজেনের প্রাকৃতিক মজুদ এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
১৯৮৭ সালে মালিতে এক দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রথম সাদা হাইড্রোজেনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সেখানকার এক পানির কূপ খননের সময় হাইড্রোজেন গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে, যা স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন স্থানে সাদা হাইড্রোজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে, তবে বড় পরিসরে মজুত চিহ্নিত করা এখনো চ্যালেঞ্জিং।
জার্মানির হেল্মহোল্টজ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেসের ভূতাত্ত্বিক ফ্রাঙ্ক জওয়ান জানিয়েছেন, প্রকৃতি নিজে থেকে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে, তবে একে শক্তির বিকল্প হিসেবে আগে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
গবেষকদের মতে, হাইড্রোজেন গ্যাস প্রাকৃতিকভাবে ভূত্বকের রেডিওএকটিভ ক্ষয়ের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। তবে তাদের গবেষণা মূলত ‘সার্পেন্টিনাইজেশন’ প্রক্রিয়ার ওপর কেন্দ্রীভূত, যেখানে পানির সাথে পৃথিবীর ম্যান্টলের লোহার সমৃদ্ধ শিলার রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়।
এই গবেষণা সাদা হাইড্রোজেনের সম্ভাব্য মজুত সম্পর্কে নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জ্বালানি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।