সার্বজনীন পেনশন ব্যাবস্থায় ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন স্কিম এনেছে সরকার। এতে করে সুবিধা ভোগ করবে দেশের চারশোর বেশি স্ব—শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মীরা। এসব কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের বিবৃতি অনুযায়ী আগে প্রভিডেন্ট ফান্ডে সংস্থার প্রদানকৃত অর্থ কর্মচারীর ‘কন্ট্রিবিউশন’ এর চেয়ে কম হলেও বর্তমানে প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠানকে কর্মীর সমপরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে এমন শর্ত রয়েছে। যার ফলে পেনশনার অধিক লাভবান হবেন। তবে বর্তমান ব্যবস্থার মত এই স্কিমে অবসরের পর এককালীন অর্থ পাওয়া যাবে না। এদিকে প্রত্যয়ের ঘোষনা দেয়ার পর থেকেই এ নিয়ে বিরোধীতা করে আসছে পাবলিক বিশ্বিবিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
নতুন স্কিমে বিরোধীতা করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, কোনো টাকা না দিয়েই তাঁরা বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় অবসরে যাওয়ার সময় এককালীন আনুতোষিক পাচ্ছেন প্রায় ৮১ লাখ টাকা। অবসরের পর প্রতি মাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা করে পেনশন পাচ্ছেন। তা ছাড়া আরোও অন্যান্য সুবিধার মধ্যে উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি পাচ্ছেন। এর মধ্যে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো ১ জুলাই বা এরপর থেকে চাকরিতে যোগ দেওয়া কেউই এসব সুবিধা পাবেন না। তারা মাসে মাসে চাঁদা দিলে পেনশন পাবেন, কিন্তু নমিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পেনশন পাবেন না। এই পুরো বিষয়টি তাঁদের কাছে অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় ক্লাস না নিয়ে এই পেনশন বিরোধী আন্দোলন করছে শিক্ষকগণ।
শিক্ষকদের এই আন্দোলনের ভিত্তিতে সরকারি সংস্থা থেকে বেশকিছু বিবৃতি পাওয়া গিয়েছে। এই বিষয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেছন, ‘সবাই যাতে সুফল পান, সে জন্যই প্রত্যয়সহ অন্য পেনশন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে এবং জনগণের কল্যাণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির বাস্তবায়ন হবেই। একে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই এবং এ থেকে পিছু হটারও কোনো প্রশ্ন আসে না। এর ভিত্তিতে বলা যায় এটি বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
নতুন এই স্কিমের আওতায় রয়েছে মোট ৪০৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ইত্যাদি সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সরকারি ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, পেট্রোবাংলা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ৯০টি সংস্থার কর্মীরা পেনশন পেয়ে থাকলেও বাকি ৩১৩টির কর্মীরা এখনো পেনশনের বাইরে আছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও ‘প্রত্যয়’ নামের এই স্কিমের আওতায় পড়বে বলে। তবে যেহেতু অবসরের পর এককালীন আর্থিক সুবিধা থাকছে না, সেহেতু এখাতের ভবিষ্যত কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। পেনশন কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে প্রশ্ন করলে তাদের কাছ থেকে জানা যায় এটা যে ভালো উদ্যোগ তাতে সন্দেহ নেই। তবে ধারণাটি যেহেতু নতুন, সেহেতু এর সাথে পরিচিত হতে এবং এটি বুঝতে মানুষকে সময় দিতে হবে। সুবিধা সম্পর্কে জানার পর বা এর সাথে সম্পূর্ণ পরিচিত হলে জনগণ স্বেচ্ছায় এতে অংশগ্রহণ করবে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত এই সার্বজনীন পেনশনের স্কিমে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছে।
বিষয়টিকে ঘিরে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় মনোভাবই দেখা যাচ্ছে। একদিকে যেমন বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এর বিপরীতে অবস্থান করছে তেমনি অন্যদিকে আবার অনেক কর্মকর্তা—কর্মচারী এর আওতায় আসার জন্য রেজিস্ট্রেশন করছে। তবে বিশ্বিবিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকদের এই আন্দোলন আবার সরকারের কাছে অযৌক্তিক মনে হওয়ায় তারা স্কিমটি বাস্তবায়নের বিষয়ে অনড়। শিক্ষকদেরকে তাদের এই আন্দোলনের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জানান শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে অথবা অনলাইন কস্নসের মাধ্যমে পুষিয়ে দেয়া হবে। ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য পাবলিক বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও একই সাথে এই ব্যাবস্থার বিপক্ষে অবস্থান করছে।