সুরক্ষা, সাম্য ও ন্যায়বিচারের দাবিতে মৌনমিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে থেকে মৌনমিছিল শুরু করেন তারা। এরপর তারা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে একইস্থানে এসে মিছিল শেষ করার পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এদেশের সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারী সরকার ছিল। ক্যাম্পাসে রাজনীতি রাখা যাবে না। দেশের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিবেচনায় কাউকে নির্যাতন না করা যাবে না। আন্দোলনকারীদের সরকারি দায়িত্ব অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট প্রবণতা থাকে। এগুলো আমরা বাংলাদেশে চাই না।
সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, আমাদের আন্দোলনতো ধ্বংস ও লুটপাটের জন্য নয়। শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে নতুন স্বপ্ন ও আলো দিয়েছে। সেই স্বপ্ন এবং আলো দিয়ে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। তারা যা করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। এ দেশের প্রতিটি সম্পদ আমাদের। এগুলো রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিবেচনায় যেন কারো উপর কোন ধরনের নির্যাতন না করা হয়। শাসন ক্ষমতায় যারা আসবে তাদের কাছে একটা আবেদন হলো, যারা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, তাদের যেন কিছুটা হলেও অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া হয় সরকারি দায়িত্বে। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে যেন কোন রাজনীতি না থাকে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা সর্বশেষ যেটা দেখি, এর চেয়ে বড় স্বৈরাচার ও স্বৈরাচারী মতাদর্শ এর আগে কখনো দেখিনি। আমরা দেখেছি বিএনপি-জামাতের পাশাপাশি বামপন্থী দলগুলোর নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়তই নির্যাতনে শিকার হয়েছে। কেউ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেই তাদের জেলে ভরে দিয়েছে। বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদেরও জামাত-শিবির বলে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যিনি আখ্যা দিচ্ছেন, তিনি হচ্ছে স্বৈরাচারের একজন চূড়ান্ত প্রতীক। জাতীয়তাবাদ ও ধর্মের মধ্যেও এই প্রবণতা থাকে। প্রতিটা ধর্মের মধ্যেই ফ্যাসিস্ট প্রবণতা থাকে। ভারতের দিকে তাকালে এটা দেখতে পারবেন। আমরা বাংলাদেশে এগুলো চাইনা।
তিনি আরো বলেন, এর আগে অনেকবার ছাত্র আন্দোলনের ফল বেহাত হয়ে গিয়েছে। এবারের কৌশলটা আরো অদ্ভুত। আমাদের এখনো সেনাবাহিনী সমর্থন করছে না। তারা এখনো নানারকমের গেমের মধ্যে আছে। আমরা কোনো জায়াগায় প্রটেকশন দেখতে পারছি না। পুলিশ বাহিনী ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় তারা জনগনের আক্রোশের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনকারীদের আমরা বিচার চাই এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জঘন্য রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে চাই। জন আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাই।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজি মামুন হায়দার রানার সঞ্চালনায় মৌনমিছিল ও সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্ত্তী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাতিল সিরাজ সহ বিভিন্ন বিভাগের ২০ জনের বেশি শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
দীন ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়