চলছে গ্রীষ্মকাল, বাজারে ফলের ছড়াছড়ি। এসব মৌসুমী ফলগুলো যেমন সুস্বাদু তেমনি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। এসব ফলমূলে শারীরিক বৃদ্ধিকারী উপাদান যেমন রয়েছে তেমনি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর ভূমিকা রয়েছে অনেক।
নাগরিক জীবনযাপনে আমরা গ্রীষ্মকালে সরাসরি গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে খেতে না পারলেও শহরের দোকানগুলোতে থাকে নানান ধরণের ফলের সমাহার। এই মৌসুমে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আম, লিচু, জাম, কাঁঠাল, পাঁকা পেঁপে, আনারস, পানিফল ইত্যাদি। যার প্রতিটি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। যেহেতু গ্রীষ্মের সময়টায় গরম থাকে প্রচুর এবং টানা রোদে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়, এ কারণেই এ সময়টায় রসালো ফল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। এসব ফলের গুনাগুনের দিকে একটু নজর দেয়া যাক।
প্রথমেই বলা যাক এই মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল আমের কথা। বাংলাদেশে এপ্রিল মাস থেকেই কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে পাকা আম আসতে শুরু করে মে মাস থেকে। জুলাই বা অগাস্ট পর্যন্ত দেশীয় আম পাওয়া যায়। আম কাঁচা এবং পাঁকা উভয়ই উপকারী তবে আঁশযুক্ত পাকা আম শরীরের জন্য বেশি ভালো। পাকা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় উপাদান পেকটিন থাকে যা পাকস্থলিতে থাকা খাদ্যকে ভালোভাবে পরিপাক করতে সাহায্য করে থাকে। তাছড়াও আমে বিশেষ কিছু এনজাইম এর উপস্থিতি থাকায় এটি খাদ্য উপাদানের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙ্গে সরল উপাদানে পরিণত করতে পারে। যা পরিপাক ক্রিয়া সহজ করে। এই ফলে আরোও আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও অন্যান্য ২৫ ধরনের ক্যারোটেনয়েডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্যও এটি বিশেষ উপকারি। এমনকি কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে আম ক্যান্সারের ঝঁুকি পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।
গ্রীষ্মকালীন আরোও একটি জনপ্রিয় ফল হলো লিচু। অত্যন্ত সুস্বাদু এবং রসালো এই ফলটি কম—বেশি সবারই পছন্দ। এর পুষ্টিগুন সম্পর্কে বললে প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে খাদ্যশক্তি ৬১ কিলো ক্যালোরি, আছে জলীয় অংশ ৮৪ দশমিক ১, শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়াম ১০ গ্রাম। লিচু শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। লিচুতে থাকা ভিটামিন সি যা ত্বক, দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী। এটিতে আরোও আছে ফ্ল্যাভানয়েডস নামের একটি উপাদান যা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। , এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি—অক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। তবে বেশি লিচু খেলে তা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে ফেলে যাতে করে পেট খারাপ এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মত সমস্যা হতে পারে।
জাম একটি রসালো ফল এতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকায় জাম খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে, যা গরমের দিনে খুবই দরকার। জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি হলে জাম খেলে এই রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ জামে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপাদান মৌসুমের আবহাওয়া অনুযায়ী শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম আরও সচল করে তোলে। গরমের রোদে গায়ে সানবার্ণ দেখা দিলে জাম সেটিও প্রতিরোধ করতে পারে। জামে থাকা প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাশাপাশি মাইক্রো এবং ম্যাক্রো মিনারেলস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। দেশের সাভার, গাজীপুর অঞ্চলে প্রচুর জন্মে। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এর জুড়ি মেলা ভার। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং এতে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্ত স্বল্পতা দূর করে।
তরমুজ আরেকটি গ্রীষ্মকালীন ফল। যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা তাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত তরমুজ রাখতে পারেন। এছাড়া তরমুজে থাকা বিশেষ উপাদান ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি রোধেও সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও আনারস, পেঁপে, কলা, পেয়ারা এগুলোর পুষ্টি গুণ নেহয়েত কম নয়। তাই এই গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে দেশীয় এবং মৌসুমী ফলের জুড়ি নেই।