১৯৫২ সালে ‘ইস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব ফিল্ম সেন্সরস’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের সূচনা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নামটি দেওয়া হয় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বহু দেশে সার্টিফিকেশন (রেটিং) প্রথাই চালু রয়েছে।
তবে বাংলাদেশে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সেন্সর প্রথা গেঁড়ে ছিল ২০ সেপ্টেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেছে সরকার। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশনয় বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে বোর্ডের সদস্যসচিব করা হয়েছে।
চলচ্চিত্রকর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মুখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩’ পাস করে বিগত সরকার। এতেঃ ১. ‘ইউ’ রেটিং পাওয়া ছবি সব বয়সী মানুষ দেখতে পারবেন। ২. ‘ইউএ’ রেটিং পাওয়া ছবিতে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য অস্বস্তিকর দৃশ্য থাকতে পারে; প্যারেন্টাল গাইডেন্স অনুসরণ করতে হয়। ৩. ‘এ’ বিভাগের সনদপ্রাপ্ত ছবি শুধু প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকের জন্য। ৪. ‘এস’ সনদ পাওয়া ছবি শুধু বিশেষ শ্রেণি–পেশার মানুষের দেখার উপযোগী।
সে আইনেই ২০ সেপ্টেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেছে সরকার।
তবে চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩’-এর বেশিরভাগ ধারাই সার্টিফিকেশন আইনে রেখে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও কড়া করা হয়েছে। ফলে সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠিত হয়েছে কেবল নামেই। এর আইন সংশোধন না করা হলে সেন্সরের খড়্গ থেকে ঢাকার চলচ্চিত্রের মুক্তি আর মিলবে না।
আগে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বা প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে সেন্সর বোর্ড খুব মাথা ঘামাত না। এ আইনে সেগুলোও সরকারি অনুমোদনের আওতায় আনা হলো। সার্টিফিকেশন বোর্ডের ‘অনুমোদন’ ছাড়া কেউ আর তা কোথাও দেখাতে পারবে না।
আইন বিশ্লেষন করে দেখা গেছে সেন্সর বোর্ডের চেয়ে সার্টিফিকেশন বোর্ডের আইন আরোও কড়াকড়ি করা হয়েছে। সেন্সর আইনে সেন্সর সনদ ছাড়া কোনো ছবি প্রদর্শন করলে সর্বোচ্চ তিন বছর, ন্যূনতম এক বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান ছিল। সার্টিফিকেশন আইনে সার্টিফিকেশনবিহীন ছবি প্রদর্শনে শাস্তি বাড়িয়ে অনধিক পাঁচ বছর করা হয়েছে। সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর বোর্ডের দেওয়া প্রতীক পরিবর্তন করলে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এসব দিকগুলো বিবেচনা করে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সেন্সর থেকে সার্টিফিকেশনে উত্তরণের যে মর্ম, তা এ আইনে কার্যকর করা সম্ভব হবে না৷ এ আইনের মূল ভিত্তি এখনো সেন্সর আইন।