তিতুমীর কলেজের ‘জিটিসি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুবল চন্দ্র পাল (জয়) বর্তমানে নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। এই ক্লাবের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারি, অর্থ কেলেঙ্কারি এবং ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে ক্লাবের অনুমোদন পাওয়া।
অভিযোগ রয়েছে যে, সুবল চন্দ্র পাল ক্লাবের সদস্যপদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব দেন। এক নারী সদস্যকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার জেরে তিনি ক্লাব ছেড়ে চলে যান। সুবল চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির এই অভিযোগ ক্লাবের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ক্লাব ছেড়ে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের উত্তক্ত করতেও দ্বিধা বোধ করেননি তিনি। বাজে মন্তব্য করে পিছু নিতেন। তিনি জানান, ক্লাবের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সাইবার ক্রাইমে মামলা করার হুমকি দেন এবং তার অবস্থান বের করারও হুমকি দেন।
অন্যদিকে, ক্লাবের আর্থিক কার্যক্রম নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। সদস্য সংগ্রহের নামে টাকা গ্রহণ করা হলেও অনেককে আইডি কার্ড প্রদান করা হয়নি এবং গ্রুপ থেকে বিনা কারণে সদস্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। টাকা আদায় করার পরও পরিষেবা প্রদান না করায়, ক্লাবের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ করে ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব’ গ্রুপে যুক্ত থাকা এক ভুক্তভোগী জানান, আমাকে ক্লাবের কার্ড দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নিয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কার্ড দেয়নি। তিনি বলেন, অভিযোগ জানালে ফোন করে হুমকি দিতেন এবং ক্লাবের পেইজ ও গ্রুপকে ব্যক্তিগত প্রোফাইল মনে করে পোস্ট করতেন।
অভিযোগ উঠেছে যে, সুবল চন্দ্র পাল ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে ক্লাবের অনুমোদন দ্রুত পেয়েছেন। ক্লাবটির কার্যক্রমের যথেষ্ট ঘাটতি থাকলেও, ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে অল্প সময়ে অনুমোদন লাভ করে। পুরাতন বিজ্ঞান ভবনের সামনে বুথ বসানোর ঘটনায় কলেজ স্টাফদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে।
ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে তুচ্ছ ঘটনাতেও প্রভাব খাটাতেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এছাড়া, ক্লাব সদস্য ও ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বনলতা বিউটিকে নিয়ে উঠা অভিযোগও গুরুতর। জানা যায়, এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার কারণে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিল। এরপরও, ক্লাবটি তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা ক্লাবটির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
একাধিক অভিযোগ থাকলেও সুবল চন্দ্র পাল (জয়) এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ক্লাবটি রাজনীতিমুক্ত ছিল এবং ক্লাবের অভ্যন্তরে কোনো রাজনীতি চলেনি। বনলতা বিউটি ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর ছাত্রলীগে যুক্ত হন, যা ক্লাবের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।
নারীদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন এবং অর্থ কেলেঙ্কারির হিসাবও তার কাছে রয়েছে বলে জানান। তবে বর্তমানে ক্লাবের দায়িত্বে নেই জয়। তবুও ক্লাবের পেইজ ও গ্রুপ ব্যক্তিগত প্রোফাইলের মতো করে পোস্ট করতেন বলে জানান অনেকে। ইনবক্সে ঢুকে ম্যাসেজ দিয়ে পোস্ট শেয়ার করতে বলতেন তিনি।
জয় জানান, আমাদের একটি আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
অভিযোগ উঠেছে যে, শুধু ‘জিটিসি স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব’ নয়, তিতুমীর কলেজের ‘বজ্রকণ্ঠ সাংস্কৃতিক সংসদ’ নামক আরেকটি ক্লাবও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে অনুমোদন লাভ করেছে। যদিও তিতুমীর কলেজে ইতোমধ্যেই ‘শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ’ নামে একটি জনপ্রিয় সংগঠন বিদ্যমান, যা নাচ, গান ও কবিতা নিয়ে কাজ করে, তবুও একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা বজ্রকণ্ঠ সাংস্কৃতিক সংসদের অনুমোদনকে ছাত্ররাজনীতির প্রভাব খাটানোর উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিতুমীর কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এ ধরনের ক্লাবগুলোর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী ও ক্লাব সংশ্লিষ্টরা।
তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, এক সময় তিতুমীর কলেজে বিরূপ প্রভাব ছিল। সে সময় অনেকেই নানা উপায়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করত। বর্তমানে নতুন সূর্য উদিত হয়েছে। এখন কোনো বৈষম্য হবে না, যোগ্যরা তাদের যথাযথ মর্যাদা পাবে।
শফিক/এমএ//