ববি প্রতিনিধি
বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৩ সাল। অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মাঝে কিছু হারানোর বেদনা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিষাদের অন্ধকার নামিয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর, হৃদরোগ, আত্মহত্যা আর সড়ক দুর্ঘটনার মত অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ২০২৩ সালে অকাল প্রয়াণ ঘটে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীর।
বছরের শুরুতে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ ও সে সময় সদ্য ক্যাম্পাসে পা রাখা ১১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল হাসান ডেঙ্গু জ্বরে মারা যান। রাকিবুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায়৷
সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, বরিশাল আসার পরে জ্বরে ভুগছিলেন রাকিবুল, তিনি বরিশালের কোনো হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে পরবর্তীতে কয়েকদিনের মধ্য বাড়ি চলে যাওয়ার পর সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।
এর ছয়মাস পর ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মোল্লা ছাত্রী নিবাসের একটি কক্ষ থেকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ২০২১-২২ সেশনের আরেক শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রিবনা শাহারিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাসা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলায়। তিনদিন রিবনার খোঁজ না পেয়ে তার মা, চাচা দরজা আটকানো অবস্থা দেখে দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে ঝুলন্ত অবস্থায় রিবনার মরদেহ দেখতে পায়৷ তার মায়ের ভাষ্যমতে, তিনি মানসিকভাবে হতাশ ছিলেন এবং তার একা থাকার প্রবণতা ছিল।
২৪ সেপ্টেম্বর সকালে বরিশাল নগরীর শেরে-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মোহাম্মাদ রাকিব ফকির নামে আরেক শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলায়।
জানা যায়, রাকিব বরিশাল নগরীর আমতলা মোড়ে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। ভোরে গোঙানির শব্দ পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় পাশের রুমের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এরপর ২৯ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সুমন মৃধা মৃত্যুবরণ করেন। ২৯ নভেম্বর রাত ২টার দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরে চিকিৎসক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহত সুমন মৃধার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায়।
লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইসরাত জাহান সূত্রে জানা গিয়েছিল, সুমন গত দুই বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। ভারত সহ নানা জায়গায় চিকিৎসা করান তিনি। তবে মৃত্যুর আগের কিছুদিন যাবৎ অসুস্থতা বোধ করছিলেন।
সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মোটরসাইকেল-ট্রাক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়ে চিরতরে পৃথিবীকে বিদায় জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান রাফি। তিনি মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক পাশ করে রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর টেরটরি অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি কীর্তনখোলা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মনিগঞ্জ গ্রামে৷ সেখানেই তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়৷ অদম্য মেধাবী আর স্বপ্নবাজ এই তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে ছিলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি থেকে মাননীয় উপাচার্য (রু.দা.) ফোন কল করলে তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের অকাল মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। তাদের এ মর্মান্তিক মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা অপূরণীয় ক্ষতি!
তিনি মৃত শিক্ষার্থীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার পরিবারের এক ঝাঁক জাতি-গড়ার কারিগর হারিয়েছে। অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থী যেন নিজেদের শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখে!
যানবাহনে চলাচলের সময় কিংবা ড্রাইভের সময় সাবধানতা অবলম্বন করে।
এছাড়া তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গৃহীত নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, এজন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সিলর নিয়োগ দিয়েছি এবং সচেতনতা ও শিক্ষামূলক বিভিন্ন সভা সেমিনারে আয়োজন করা হচ্ছে।
তিনি সামগ্রিকভাবে সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
মেহেদী হাসান
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়