৫০ বছর পর ঢাকা শহরের চিত্র কী দাঁড়াবে?
ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে প্রায় ২ কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করে। কিন্তু দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ৫০ বছর পর ঢাকা শহরের চিত্র কী দাঁড়াবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
ঢাকার জনসংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৩-৪% হারে বাড়ছে। বর্তমানে শহরটির জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩,০০০ জনেরও বেশি। যদি এই হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে ৫০ বছর পর ঢাকার জনসংখ্যা ৪-৫ কোটিতে পৌঁছাবে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাছাড়া অপর্যাপ্ত পরিকল্পনার কারণে বস্তির সংখ্যা বাড়তে পারে, এবং নাগরিক সুবিধাগুলো আরও সীমিত হয়ে পড়বে।
ঢাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েক মিটার উঁচুতে অবস্থিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে ঢাকার বড় একটি অংশ জলমগ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এছাড়াও বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা আছে।
ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে একটি। ৫০ বছর পর এই দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ার কারণে ঢাকার তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বসবাসকে কঠিন করে তুলবে।
ঢাকার যানজট বিশ্বের সবচেয়ে খারাপগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিদিন গড়ে ২-৩ ঘণ্টা যানজটে কাটে নাগরিকদের। যদি গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন না হয়, তাহলে ৫০ বছর পর ঢাকার যানজট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (BRT), এবং অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ যানজট কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ঢাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র, যেখানে দেশের মোট জিডিপির একটি বড় অংশ আসে ।যদি কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়ানো না হয়, তাহলে বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে।
ঢাকা ধীরে ধীরে প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছে, কিন্তু এখনও একটি স্মার্ট সিটি থেকে অনেক দূর। ৫০ বছর পর ঢাকা একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট সিটিতে পরিণত হতে পারে, যেখানে ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং ডিজিটাল পরিসেবাগুলো নাগরিক জীবনের মান উন্নত করতে পারে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং নাগরিক সুবিধাগুলো আরও দক্ষ ও সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে অনেক মানুষ ঢাকায় পাড়ি জমাচ্ছে। এরকম হতে থাকলে ৫০ বছর পর ঢাকায় জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য টেকসই আবাসন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৫০ বছর পর ঢাকা শহরের চিত্র কী দাঁড়াবে, তা নির্ভর করবে আজকের সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপের ওপর। যদি টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে ঢাকা একটি আধুনিক, বসবাসযোগ্য এবং প্রাণবন্ত শহরে পরিণত হতে পারে। অন্যথায়, এটি বসবাসের অযোগ্য ও সংকটপূর্ণ শহরে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আমাদের আজই সচেতন হতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
ভিডিওটি যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল আইকন টিপে নোটিফিকেশন চালু রাখুন। ধন্যবাদ!