ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে চলতি মাসের ৫ তারিখে পতন হয় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ঘোষণার পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) শপথ নেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৭ জন উপদেষ্টা। এদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দেশের নোবেলজয়ী বরেণ্য অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ ১৭ জন উপদেষ্টার পরিচিতি সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন বখতিয়ার নাসিফ আহাম্মেদ এবং রুশাইদ আহমেদ।
প্রধান উপদেষ্টা: প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বরেণ্য সামাজিক উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অগ্রণী কর্মের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন ইউনূস। তিনি ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা দরিদ্রদের জন্য জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে থাকে। এই পদ্ধতি লক্ষ লক্ষ মানুষকে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়ন করেছে।
‘মাইক্রোক্রেডিট’ আবিষ্কারের কৃতিত্বের জন্য ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়। তার কাজ বিশ্বব্যাপী অনুরূপ ক্ষুদ্রঋণ উদ্যোগকে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন এবং সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূস, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেলেন এই কিংবদন্তি।
অন্যান্য উপদেষ্টামণ্ডলীর পরিচয় নিম্নরূপ:
১. সালেহউদ্দিন আহমেদ
ব্রিটিশ শাসনামলে বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্ম নেওয়া সালেহউদ্দিন আহমেদ একাধারে অর্থনীতিবিদ,শিক্ষক ও গভর্নর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে এমএ পাস করে সালেহউদ্দিন যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে। কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করা এই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পযন্ত। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবেও দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তিনি।
২. মো. আসিফ নজরুল
একাধারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, লেখক,ঔপন্যাসিক ও কলামিস্ট হিসেবে পরিচিত ড. মো. আসিফ নজরুল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করা আসিফ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন সোয়াস (স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে।
টেলিভিশন টকশো ও কলামে সাহসী রাজনীতি বিশ্লেষণের জন্য ড. আসিফ নজরুল দেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। স্বনামধন্য নানা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কনসালট্যান্ট হিসাবে কাজ করা এই অধ্যাপক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়েও সরব ভূমিকায় ছিলেন।
৩. এম সাখাওয়াত হোসেন
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখওয়াত হোসেন একজন সামরিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী ও বাংলাদেশের সাবেক নির্বাচন কমিশনার। পাকিস্তান শাসনামলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বরিশালে জন্মানো সাখাওয়াত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসাবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পরে ২০০৭-২০১২ পযন্ত নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাজ করে সুখ্যাতি লাভ করেন সাখাওয়াত। ড.ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার দ্বায়িত্ব আরোপিত হয়েছে তার উপর।
৪. আ ফ ম খালিদ হোসেন
চট্টগ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা আ ফ ম খালিদ হোসেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ ও এমএ পাশ করে ওমরগনি এম ই এস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনা করেন তিনি। এ ছাড়াও, ইসলামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন এই আলেম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করা খালিদ
২০২০ সালের হেফাজতে ইসলাম এর নায়েবে আমীর এবং ২০২১ সালের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর শিক্ষা উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
৫. সুপ্রদীপ চাকমা
সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে সচিব পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুপ্রদীপ। মেক্সিকো এবং ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত থাকা এই ব্যক্তি ড. ইউনুসের সরকারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
৬. এ এফ হাসান আরিফ
এ এফ হাসান বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল। ফখরুদ্দিন আহমেদের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিচার, আইন, ভূমি, ধর্ম ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি। ড.ইউনুসের সরকারেও তাঁকে দেখা যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।
৭. আদিলুর রহমান খান
সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খানের জন্ম সিলেটে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও অংশগ্রহন করেন। তিনি সরব ছিলেন ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের হত্যাকাণ্ডের বিরূদ্ধেও। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখায় আদিলুর রহমান খান লাভ করেছেন ‘রবার্ট এফ কেনেডি পুরস্কার’ এবং ‘গোয়াংজু পুরস্কার’।
৮. ফারুকী আযম
বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা ফারুকী যুদ্ধ শেষে যোগ দেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে। এবার ড.ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে থাকবেন তিনি।
৯. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আইজেনহাওয়ার থেকে ফেলোশিপ অর্জন করেন রিজওয়ানা। বন ও পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় প্রথম বাংলাদেশ হিসেবে তিনি পেয়েছেন পরিবেশের নোবেলখ্যাত ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’। এ ছাড়াও, ‘রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার’, ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার’ এবং টাইমস ম্যাগাজিন থেকে ‘হিরোস অফ এনভায়রনমেন্ট’খেতাব অর্জন করেন এই আইনজীবী।
১০. ডা. বিধান রঞ্জন রায়
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায়ের জন্ম সুনামগঞ্জে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছে বিধান রঞ্জন রায়।
১১. শারমিন মুরশিদ
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন শারমিন মুরশিদ।বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার এবং অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলে ব্যাপক সাড়া ফেলেন তিনি। সমাজকল্যাণ সংস্থা ‘ব্রতী’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা শারমিন মুরশিদ অনেকটা অকস্মাৎভাবেই দায়িত্ব পেলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে।
১২. মো. তৌহিদ হোসেন
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন। তৌহিদ হোসেন ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভারতে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন তৌহিদ।
১৩. ফরিদা আখতার
লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী ফরিদা আখতার চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হারলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা এই নারী আন্দোলনকারী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি করে থাকেন।
১৪. নূরজাহান বেগম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নূরজাহান বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ সালে। ১৯৭৬ ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের অন্যতম সহযোগীও ছিলেন তিনি। এ ছাড়া, নূর জাহান বেগম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাইক্রো-ক্রেডিট প্রোগ্রামের পরামর্শদাতা, প্রশিক্ষক এবং মূল্যায়নকারী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, ইউএসএসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার বোর্ডের দায়িত্বেও ছিলেন।
১৫. নাহিদ ইসলাম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম ১৯৯৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘ফাহিম’। ২০২২ সালে অনার্স শেষে একই বিভাগে মাস্টার্স এ অধ্যায়নরত আছেন তিনি।
ছাত্রজীবন থেকে অদ্যাবধি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় নেতার ভূমিকাও পালন করেছেন। নাহিদই কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হত্যার জন্য অসহযোগ আন্দোলন এবং শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার ও উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন তিনি।
১৬. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা আসিফ কলেজ জীবনেও বিএনসিসি ক্যাডেট প্লাটুনের সার্জেন্ট ছিলেন।
কোটা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আসিফ। আন্দোলনের সময় তাকে গুম করে অমানুষিক নির্যাতন করে সরকারপন্থী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ড. ইউসুফের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপদেষ্টার ভূমিকা থাকবেন তিনি।
রুশু//