অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ডিএমপি, কোস্ট গার্ড এবং বিশেষ শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত ও কার্যকরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। এ লক্ষ্যে একটি সমন্বিত কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হবে, যা বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন এই কমান্ড কাঠামো দক্ষতা ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে দেশের সব নিরাপত্তা সংস্থা ও থানার কার্যক্রম একীভূতভাবে পরিচালনা করবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির যেকোনো প্রচেষ্টার বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মতো সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এ বছর দেশ ও জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ কাউকে দেওয়া যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে এবং বিভিন্ন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। জনগণকে এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনীকে মানবাধিকার সুরক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এ বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।”
তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “রমজান মাসকে সামনে রেখে বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে, যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি না ঘটে।”
পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম জানান, শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্তের জন্য ১০টি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন এবং নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
পুলিশ মহাপরিদর্শক আরও জানান, বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির অনুরোধ পাঠিয়েছে এবং শিগগিরই এর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, রাজধানীতে পুলিশের কঠোর নজরদারির ফলে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যাতে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা যায়।”