২০১১ সাল থেকে আইসিসির সাদা বলের টুর্নামেন্টে ভারতের পারফরম্যান্স অত্যন্ত চমকপ্রদ। ৮৬ ম্যাচের মধ্যে ৭০টিতে জয়লাভ করে তারা এই সময়কালে সবচেয়ে সফল দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া ৭৭ ম্যাচে ৪৯টি জয় পেয়েছে, যা ভারতের চেয়ে ২১টি কম। নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা উভয় দলই ৭৭ ম্যাচ খেলে ৪৫টি করে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড ৮০ ম্যাচ খেলে ৪১টিতে জয়লাভ করেছে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, ভারত সাদা বলের ক্রিকেটে অন্য সব দলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
২০১১ সালের পর থেকে আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারত এবং নিউজিল্যান্ড নকআউট পর্বে নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকার ক্ষেত্রে অন্যতম সফল দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই সময়ে মোট ১৪টি আইসিসি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ভারত ১২ বার নকআউট পর্বে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। শুধুমাত্র দুবার (২০১২ এবং ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে) তারা নকআউট পর্বে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ১২ বার নকআউট পর্বে পৌঁছে ভারত চারবার সেমিফাইনালে হেরেছে, পাঁচবার রানার্সআপ হয়েছে এবং তিনবার শিরোপা জিতেছে।
নিউজিল্যান্ডও এই সময়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তারা ১৪টি টুর্নামেন্টের মধ্যে আটবার নকআউট পর্বে উঠেছে। এই আটবারের মধ্যে চারবার তারা সেমিফাইনালে হেরেছে এবং তিনবার রানার্সআপ হয়েছে। ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জিতে তারা একটি শিরোপা জিতেছে। এখানে নকআউট পর্ব হিসাবে ন্যূনতম সেমিফাইনালে উঠাকে বিবেচনা করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, ভারত এবং নিউজিল্যান্ড উভয়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের ধারাবাহিকতা এবং প্রতিযোগিতামূলক মান বজায় রেখেছে।
২০১১ সাল থেকে আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের পারফরম্যান্সে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তারা পাঁচবার গ্রুপ পর্বে কোনো ম্যাচ না হেরেই নকআউট পর্বে উঠেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ উদাহরণ হলো ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, যেখানে ভারত গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থেকে শিরোপা জিতেছে।
নিউজিল্যান্ডও এই সময়ে দুটি টুর্নামেন্টে (২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) গ্রুপ পর্বে কোনো ম্যাচ না হেরেই নকআউট পর্বে উঠেছে, যা তাদের প্রতিযোগিতামূলক মানের প্রমাণ দেয়।
২০১১ সালের পর থেকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত গ্রুপ পর্বে মোট ৩৮টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে মাত্র তিনটিতে হেরেছে এবং একটিতে টাই হয়েছে। ভারতের শেষ গ্রুপ পর্বের হার ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, যা প্রায় ৬ বছর আগের ঘটনা। এরপর থেকে তারা টানা ১৪টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ জিতেছে, যা তাদের ধারাবাহিকতা এবং প্রভাবশালী পারফরম্যান্সের পরিচয় দেয়। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, ভারত গ্রুপ পর্বে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ধারাবাহিকভাবে নকআউট পর্বে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অন্যতম সেরা দল।
ভারতের ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা-এর নেতৃত্ব ও পারফরম্যান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কোহলি আইসিসি টুর্নামেন্টে তিনবার ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ হয়েছেন—২০১৪ এবং ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। ২০২৩ বিশ্বকাপে তিনি ঘরের মাঠে ৭৬৫ রান করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন, যা তাঁর অসাধারণ ফর্ম এবং ধারাবাহিকতার প্রমাণ।
অন্যদিকে, রোহিত শর্মা ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৭টি সেঞ্চুরি করেছেন, যা যেকোনো ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি। ২০১৯ বিশ্বকাপে তিনি এক আসরে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বাধিক ৫০টি ছক্কা মেরে তিনি ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে নিজের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন।
রবীন্দ্র জাদেজা ভারতের অলরাউন্ডার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এই টুর্নামেন্টে ভারতের সর্বোচ্চ ২০ উইকেট নিয়েছেন এবং ২০১৩ সালের ফাইনালে ম্যাচসেরা হন। এছাড়াও, মোহাম্মদ শামি ২০২৩ বিশ্বকাপে ২৪টি উইকেট নিয়ে ভারতের হয়ে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন, যা ভারতের বোলিং আক্রমণকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।
এই খেলোয়াড়দের অবদান ভারতকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্য এনে দিয়েছে এবং তাদের নেতৃত্বে ভারত ক্রিকেট বিশ্বে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।
নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের পেছনে কেইন উইলিয়ামসন-এর অবদান অপরিসীম। তিনি আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী এবং দলের মেরুদণ্ড হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন এবং তাঁর ব্যাটিং পারফরম্যান্স দলকে ফাইনালে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল। উইলিয়ামসনের স্থিরতা এবং নেতৃত্ব নিউজিল্যান্ডকে ক্রিকেট বিশ্বে একটি শক্তিশালী অবস্থান দিয়েছে।
মিচেল স্যান্টনারও নিউজিল্যান্ডের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি ১০ উইকেট নিয়ে দলকে সেমিফাইনালে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তিনি অর্থনৈতিক বোলিং (৪.৮৫ ইকোনমি রেট) করে ৭ উইকেট নিয়েছেন, যা দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ম্যাট হেনরি নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণের অন্যতম স্তম্ভ। ২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে তিনি ভারতের বিপক্ষে ৩৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তিনি ৪ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছেন, যা নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণকে শক্তিশালী করেছে।
এই খেলোয়াড়দের অবদান নিউজিল্যান্ডকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্য এনে দিয়েছে এবং তাদের পারফরম্যান্স দলকে ক্রিকেট বিশ্বে একটি প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।