বিশেষ প্রতিনিধি: খুলনার কয়রা উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর ব্যানারে ইফতার মাহফিল আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শিক্ষার্থী সমাজ ও সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়রা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তার অনুসারী আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে চাঁদা তুলে ইফতার আয়োজনের অভিযোগ এনেছেন একই সংগঠনের সদস্য সচিব এস কে গালিবসহ কয়েকজন নেতা।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) কয়রা উপজেলা পরিষদ মাঠে এক বিশাল প্যান্ডেলের নিচে এনসিপির ব্যানারে ইফতার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সংগঠনের সদস্য সচিব গালিব বলেন:
❝কয়রায় এখনো এনসিপির কোনো কমিটি গঠন হয়নি। ফলে গ্রহণযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের সংগঠিত করার কাজ চলছে। কিন্তু কমিটি না থাকা সত্ত্বেও এনসিপির নাম ব্যবহার করে ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছাপানো দাওয়াতপত্রের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও চাঁদা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।❞
কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান জানান, ইফতার আয়োজনের জন্য রব্বানী ও রউফ তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। একইভাবে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, গোলাম রব্বানী ও তার দল ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি বাধ্য হয়ে তা দিয়েছেন।
একজন আওয়ামীপন্থি ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চাঁদা না দিলে তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল, ফলে তিনি বাধ্য হয়ে অর্থ প্রদান করেন।
ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্রে আয়োজকদের নাম উল্লেখ না থাকলেও দুটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়। একটি নম্বরে কল করলে গোলাম রব্বানী ফোন ধরেন, অন্যটি ছিল আব্দুর রউফের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রব্বানী দাবি করেন, ইফতার আয়োজন তাদের ব্যক্তিগত অর্থ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় করা হয়েছে। তার মতে, ভালো কাজ দেখে অনেকেই হিংসা করছেন এবং মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলার মুখ্য সংগঠক ইমদাদুল হক বলেন:
❝৫ আগস্টের আগে আমরা সকলে রাজপথে আন্দোলন করেছি। পরে কৌশলে রব্বানী আহ্বায়কের পদ দখল করেছেন। ইফতার আয়োজনের ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে রব্বানী স্বীকার করেছেন যে, চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছে।❞
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) খুলনা জেলা সংগঠক হামীম আহম্মেদ রাহাত জানান, এনসিপির খুলনা জেলা কমিটিই এখনো গঠিত হয়নি, ফলে উপজেলা কমিটির প্রশ্নই আসে না। কয়রায় এনসিপির ব্যানার ব্যবহার করে চাঁদা সংগ্রহের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।