ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি রক্ষার দাবিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের উত্তরসূরি এবং ওয়াক্ফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী হিসেবে পরিচয় দেওয়া ইয়াকুব হাবিবউদ্দিন টুসি।
মহারাষ্ট্র রাজ্যের ছত্রপতি সম্ভাজীনগর জেলার কুলদাবাদে অবস্থিত এই সমাধি ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্ক ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে। তাই চিঠিতে আওরঙ্গজেবের সমাধিকে “জাতীয় গুরুত্বের স্মৃতিস্তম্ভ” হিসেবে উল্লেখ করে এর সুরক্ষা ও সংরক্ষণে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ইয়াকুব।
১৯৫৮ সালের ‘প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও অবশেষ আইন’-এর অধীনে এই সমাধি সুরক্ষিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আশেপাশে কোনো অননুমোদিত নির্মাণ বা পরিবর্তন বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতিসংঘের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে তিনি অনুরোধ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (এএসআই) যেন এই সমাধিকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পূর্ণ নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করে।
চিঠিতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখেন, ভারতীয় বলিউড সিনেমা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিহাসের বিকৃত উপস্থাপনা জনমতকে প্রভাবিত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে জনগণের একাংশের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং সমাধি অপসারণের মতো দাবির পাশাপাশি আগ্রাসী প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে।
তিনি এই প্রবণতাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে ইউনেসকোর ১৯৭২ সালের হেরিটেজ কনভেনশনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ভারত এই কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায়, তার সাংস্কৃতিক নিদর্শন সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ইয়াকুব।
সম্প্রতি, বলিউডের “ছাভা” সিনেমা মুক্তির পর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো নতুন করে আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবি তোলে। তারা অভিযোগ করে যে সমাধিস্থলে একটি হিন্দু মন্দির ছিল এবং সেখানে গুপ্তধন লুকানো আছে—এই দাবি ঘিরে শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি।
এর জেরে ১৭ মার্চ নাগপুরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোরআন পোড়ানোর গুজব ছড়ালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৯২ জনকে গ্রেপ্তার করে।
ঐতিহাসিকভাবে আওরঙ্গজেব ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী সম্রাট। ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর ভারত শাসনের পাশাপাশি দেশজুড়ে বিস্তৃত প্রশাসনিক কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল এবং ‘জিন্দাপীর’ একজন দক্ষ শাসক হিসেবে স্বীকৃত। তার সমাধিকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক দেশজুড়ে ইতিহাস, ধর্ম ও রাজনীতির জটিল সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটিয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।