বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ পালন করা হচ্ছে। ২০১২ সালের এই দিনে তিনি আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর অসামান্য অভিনয় আজও দর্শক, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের হৃদয়ে জীবন্ত।
হুমায়ুন ফরিদী ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভাবান ও শক্তিমান অভিনেতা, যিনি তাঁর চরিত্রগুলিকে এত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতেন যে দর্শকরা তাঁদের মাঝে হারিয়ে যেতেন। কখনো নায়ক, কখনো খলনায়ক, কারো কাছে আদর্শ আর কারো কাছে উপমা হয়ে তাঁর অবদান অভিনয় জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে চিরস্মরণীয়। তিনি ঢাকা থিয়েটার থেকে শুরু করে মঞ্চ, টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর প্রবেশ ঘটে এবং পরবর্তীতে তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। খল চরিত্রে তাঁর অভিনয় হলেও ইতিবাচক চরিত্রেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল অতুলনীয়, যা দর্শকেরা মঞ্চ, টেলিভিশন নাটক ও সিনেমায় উপভোগ করেন।
তাঁর অভিনয় জীবনের স্বীকৃতিতে তিনি মাতৃত্ব চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা, একুশে পদকে ভূষিত করে। তাঁর অভিনয়কে সর্বকালের সেরা হিসেবে গণ্য করা হয়।
হুমায়ুন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং স্বাধীনতার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
তাঁর টেলিভিশনে প্রথম উপস্থিতি আসে সেলিম আল দ্বীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকে তক্ষক চরিত্রে, এবং ১৯৮২ সালে ‘নীল নকশার সন্ধানে’ নাটকে অভিনয় করে তিনি টেলিভিশনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর ‘ভাঙ্গনের শব্দ শোনা যায়’, ‘সংশপ্তক’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’ ও ‘কোথাও কেউ নেই’সহ জনপ্রিয় নাটকে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সিনেমায় তিনি ‘মায়ের অধিকার’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘টাকার অহংকার’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘জয়যাত্রা’ ও ‘শ্যামল ছায়া’সহ বহু উল্লেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘এক জবানের জমিদার, হেরে গেলেন এবার’, যার শুটিং ২০০৯ সালে শুরু হয়ে ২০১১ সালে সম্পন্ন হয় এবং ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট দেশব্যাপী ৬০টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়।
হুমায়ুন ফরীদি ৬০ বছর বয়সে ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তাঁর স্মৃতি ও অবদান চিরকাল আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।