দক্ষিণের শিল্পনগরী খুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে রাত হলেই নগরীজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসী হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্র, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ গুলি কিংবা ছুরি-দা দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ৪ মাসে খুলনা নগরীতে ১১ খুনের ঘটনা ঘটেছে।
যার সর্বশেষ ঘটনা শুক্রবার রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার (২৬) হত্যাকাণ্ড।
নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে চা খাওয়ার সময় অর্ণবকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুলিশ তিনটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে, তবে অর্ণবের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সন্দেহ প্রকাশ করা হয়নি।
গত কয়েক মাসে আরও অনেক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসে এক কৃষকদল নেতার দুই চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু সেই ঘটনায়ও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এছাড়া, গত সোমবার ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি পৃথক স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় যুবদলের এক নেতা নিহত হন এবং আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, খুলনা শহর ও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক ব্যবসায়ী এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলাগুলোর সাথে যুক্ত। সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
খুলনার নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার জানান, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সন্ত্রাসীরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা চরমভাবে সংকটে রয়েছে।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর খুলনার পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। পুরোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং মাদক কারবারিরা এলাকায় ফিরে এসেছে। বেশিরভাগ থানায় নতুন কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছেন, ফলে সন্ত্রাসীদের চিনতে তাদের কিছুটা সময় লাগছে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং শহরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে ১২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
আরইউএস