ভাষা শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে চবি উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কদির। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলনের মূল স্লোগান ছিল ‘সর্বস্তরের বাংলা ভাষা চালু করতে হবে’। সেটা আজও সর্বস্তরের চালু করতে পারিনি। আদালতেও পারিনি, উচ্চ শিক্ষাঙ্গনেও পারিনি। এর পরিবর্তে আমরা দেখছি, মোড়ে মোড়ে অক্সফোর্ড স্কুল, ক্যাম্ব্রিজ স্কুলের সাইনবোর্ড। আমি সরকারের হালকা সমালোচনা করবো, শিক্ষানীতির মধ্যে ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল এই এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলো জন্য কোন নীতিমালা নেই। তারা যা খুশি বেতন নিতে পারে, বেতন দিতে পারে।
চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলাম, তখন উপাচার্য ছিলেন মরহুম অধ্যাপক ড. আর আই চৌধুরী স্যার। একদিন হল সংসদে অধ্যাপক ফজলে হোসেন স্যার সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস কিন্তু হাইজেক হয়ে গেছে।’ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জাতির কাছে সত্যিকার ফুটে উঠেনি। ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিল তমদ্দুন মজলিস, আর তার নেতৃত্বে ছিল ডাকসু। অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আই আর চৌধুরীর সামনেই বলেছিলেন, ইয়াহিয়া কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, সেটি ওনার হাতে লেখা। যেটি দিয়েছিলেন তৎকালীন ডাকসু জিএস৷ বাংলাদেশের যখনই ইতিহাস লেখা হয়, তখন সত্য ইতিহাস না লিখে মিথ্যা ইতিহাস জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে থেকেও আমরা বাংলার ভাষার চর্চা করতে পারিনি। এটির মধ্যে একটি কলোনিয়াল প্যারামিটার রয়েছে। আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের মধ্যে একধরনের ম্যানটাল কলোনাইজেশন হয়েছে যে, ইংরেজি ভাষা বা অন্য ভাষা না শিখলে আমরা ভালো শিক্ষিত হতে পারবো না। ভালো জ্ঞান চর্চা করতে পারবো না। আমি ভালো কোন কিছু করতে পারবো না। আপনারা কানুন ফি দিন সম্পর্কে জানেন, এটি পৃথিবীর এমন কোন ভাষায় নেই, যেটাতে এই বই অনুদিত হয়নি। অর্থাৎ সবচেয়ে বড় কথা বলো আপনার নিজের ভাষায় অবারিত জ্ঞান চর্চার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, আলোচনা সভায় বাংলা একাডেমি অনুবাদে পুরস্কার প্রাপ্ত ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম হোসেন হাবীবকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
সুমন ইসলাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়