দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ট্রেনের গার্ড দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) হাবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ রবিউল ইসলাম ইদের ছুটি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য দোলনচাঁপা এক্সপ্রেসে গাইবান্ধা থেকে দিনাজপুর যাত্রা করেন।
শিক্ষার্থীটি যাত্রার জন্য দোলনচাঁপা এক্সপ্রেসের শোভন শ্রেণিতে ঙ-১৯ আসনে সোনাতলা টু দিনাজপুর
টিকেট ক্রয় করেন। টিকেটটির ক্রমিক নংঃ ০০৯৮৮১।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর সাথে একটি ছোট বাইসাইকেল সহ কিছু মালামাল ছিল। নিজের জন্য এবং বাইসাইকেলের জন্য টিকেট কিনেন ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। টিকেটে উল্লেখ ছিল শিক্ষার্থী নিজ দায়িত্বে বাইসাইকেলটি রাখবেন। ৮৫ টাকা মূল্যের ঐ টিকেটের ক্রমিক নংঃ ১৭৯২৩৮।বিপত্তি বাঁধে যখন ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ট্রেনে উঠতে যায়। মালবাহী বগিতে সাইকেল উঠাতে গেলে গার্ড সাইকেল উঠানোর কথা নিষেধ করে এবং কথা বলার এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলে। শিক্ষার্থীর সাথে থাকা ল্যাপটপ ফেলে দেয় এবং সাইকেলও ফেলে দেয় ট্রেন থেকে।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নির্যাতনের এক পর্যায়ে গিয়ে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবেও পরিচয় দেন।কিন্তু তাতেও থামেনি ঐ আগ্রাসী গার্ড।সে তুই তুকারি করে শিক্ষার্থীকে মারতে থাকে এবং বলতে থাকে তুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও কিছু না।বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হইছোস তো কি হইছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে কান্না জড়িত কন্ঠে প্রতিবেদককে বলেন,আমি গাইবান্ধা থেকে দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য দোলনচাঁপা এক্সপ্রেসে উঠি।আমার সাথে একটি বাইসাইকেল ছিল। আমি যখন মালবাহী বগিতে বাইসাইকেল উঠাতে যায় তখন তিনি বাইসাইকেল উঠাতে দেয়না।বলে যে ট্রেনে সাইকেল নিয়ে ওঠা যাবে না।কিন্তু আমি বাইসাইকেলের জন্য টিকেট করি।যেখানে বলা ছিল আমি নিজ দায়িত্বে বাইসাইকেল নিয়ে যাবো।ওনার আচরণে আমার মনে হয়েছে কাউন্টারে টিকেট কিনে ভুল করেছি,ওনার থেকে ব্ল্যাকে টিকেট কিনতে হতো,তাহলে উনি কালো অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেতেন ।উনি কোনোভাবেই আমাকে বাইসাইকেলটি মালবাহী বগিতে তুলতে দেয়নি।সেখানে উপস্থিত অন্যান্য যাত্রীরা আমাকে কষ্ট করে সাইকেলটি আমার সিটের পাশে রাখার পরামর্শ দেন এবং আমি তাই করি।পরবর্তীতে যখন মালবাহী বগিতে জায়গা আরো ফাঁকা হয় তখন আমি সেখানে আমার সাইকেলটি রাখি।ঠিক সেইসময় ওই গার্ড এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বলে তোকে আমি এখানে সাইকেল তুলতে নিষেধ করছি তুই কেনো সাইকেল তুললি?
প্রতিত্তোরে আমি বলেছিলাম আমার তো টিকেট করা আছে আপনি আমার সাথে এমন দুর্ব্যবহার করছেন কেন?তখন গার্ড বলে আমি তোকে ট্রেনে নিবনা দেখি তোর কোন বাপ তোকে ট্রেনে নেয়।এবং কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে মারধর করেন।আমার সাথে থাকা ল্যাপটপ ফেলে দেন। ল্যাপটপটির ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে গেছে,স্পিকারের এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের সমস্যা দেখা দিয়েছে। রেললাইনের পাশে সাইকেল ফেলে দেন।আবারো সেই যাত্রীরা আমার ল্যাপটপটি,সাইকেলটি ট্রেনে তুলেন এবং আমাকে অত্যাচারী গার্ডের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচান। উপায়ন্তর না দেখে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু -বান্ধব এবং সিনিয়র ভাইদের সাথে যোগাযোগ করি।সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানার পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। যাতে আমার আর কোনো সমস্যা না হয়।
ঐ শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানিয়ে আরো বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হওয়ার পরেও আমাদের সাথে এমন খারাপ আচরণ করে,মারধর করে।তাহলে সাধারণ মানুষদের সাথে কত খারাপ ব্যবহার করে।আমরা কি দেশের নাগরিক না?আমাদের নাগরিক অধিকার হরণ করে নিচ্ছে এইসব টিটি আর গার্ডেরা ।এর আগেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই নির্যাতিত হয়েছিল। লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনোকিছু হয়নি।এরা কি শুধু আজীবন এভাবেই অন্যায় করে পার পাবে?এই নৈরাজ্যের শেষ কোথায়?
আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।কোনো টিটি,গার্ড যেনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তো দূরে থাক কোনো সাধারণ যাত্রীর সাথেও এমন অরাজকতা করার সুযোগ না পায়।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ মামুনুর রশিদের সাথে কথা বললে প্রতিবেদককে তিনি বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সাথে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। বিষয়টি জানা মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতনের সাথে কথা বলেছি।তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে চেয়েছেন। তবে প্রত্যাশা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে যেন এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
উল্লেখ্যঃ এর আগেও ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর একতা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা থেকে দিনাজপুর আসার সময় ট্রেনের টিটি কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছিল হাবিপ্রবির কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক।
নাঈম ইসলাম সংগ্রাম
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়