বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দীশালা পরিদর্শন করেছেন। তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল, র্যাব-২ এর সিপিসি-৩ এর অভ্যন্তরীণ সেল এবং র্যাব সদর দপ্তরের টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেন্টারে যান।
ড. ইউনূসের এই পরিদর্শনে তার সঙ্গে ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এছাড়া গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য ও কয়েকজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এই গোপন বন্দীশালাগুলো রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরা এলাকায় অবস্থিত। প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ড. ইউনূস বন্দীশালার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখছেন।
এর আগে, ১৯ জানুয়ারি গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের অনুরোধ জানান।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করে। কমিশন ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করছে এবং ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ক্রসফায়ার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা হয়। বিএনপি দাবি করেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১,০২৪ জনকে গুম করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৮১ জনকে পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখনও ১৫৭ জনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২,৬৯৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং ৬৭৭ জন গুম হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য গুমের ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলী, সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরু এবং জামায়াত-শিবিরের অন্তত ৯ জন। তাদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।