ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু এই নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দেন, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। তুরস্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির বরাতে এই তথ্য জানা গেছে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, “ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি মালদ্বীপের দৃঢ় সংহতি অব্যাহত রয়েছে।” বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে মালদ্বীপ বরাবরই সোচ্চার অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়াও, তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে চলেছে। এরই অংশ হিসেবে এবার দখলদার ইসরায়েলের নাগরিকদের মালদ্বীপে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো দেশটির সরকার।
এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক মুখপাত্র আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হবে এবং ভবিষ্যতেও ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে মালদ্বীপ তাদের অবস্থানে অনড় থাকবে। আজন্মকাল ধরেই সকল ধরনের অন্যায়, অত্যাচার ও দখলদারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠে উচ্চারণ করা মালদ্বীপের ঐতিহাসিক দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিবৃতিতে এটাও পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে, মালদ্বীপ দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রয়েছে। ফলে সকল ধরনের দখলদারত্ব এবং অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটিয়ে অবিলম্বে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ফিলিস্তিন-মালদ্বীপ সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে ভরপুর। মালদ্বীপ বারবার ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।
পাশাপাশি, ইসরায়েল কর্তৃক গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ধারাবাহিক হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশটি। এমনকি জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার অধিবেশনেও মালদ্বীপ স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে মালদ্বীপের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে এক সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মত ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বার্তাই নয়, বরং একটি মানবিক অবস্থান—যা বিশ্বের অন্য দেশগুলোকেও বিবেকের জায়গা থেকে ভাবিয়ে তুলতে পারে।