ঈদুল আযহার ছুটিতে আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে ৮ দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে জনসংযোগ বলছে জরুরি প্রয়োজনে প্রাধ্যক্ষের কাছে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে আবাসিক হলে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে । ৬ জুন শুক্রবার থেকে ১২ জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হলগুলো বন্ধ থাকবে। ১৩ জুন সকাল ১০টায় হলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হবে। তবে কেউ হলে অবস্থান করতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বরাবর আবেদনপত্র জমা দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন পরিষদ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ । তারা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে দুর্বলতা ও ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলছে ঈদের ছুটির পরপরই অনেক বিভাগের পরীক্ষা আছে; এছাড়াও বিসিএস, ব্যাংক, নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও অনেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যান না। নিরাপত্তার অজুহাতে হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বর্তমান প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক যেখানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলা থাকবে।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাকিবুর রহমান বলেন, ঈদের কদিন পরেই আমার চাকরির পরিক্ষা আছে। আমি যদি এখন ৮ দিন বাড়িতে থেকে আসি, তাহলে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর স্নাতক শেষ করে চাকরি ছাড়া বাড়ি গিয়ে আনন্দ করার মতো কোনো অনুভূতি অনুভব হয়না। কিন্তু প্রশাসনের এমন সিন্ধান্তের জন্য ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদেও বাড়ি যেতে হবে। প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এমন সিন্ধান্তের নিন্দা জানাই।
হল বন্ধের বিষয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক মেহেদী মারুফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা নাকি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না এজন্য হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। তারা যখন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় দিতে পারবে না,তাহলে তাদের এই পদে থাকার কি দরকার! নূন্যতম লজ্জাবোধ থাকলে এই প্রশাসনকে পদত্যাগ করা উচিত।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, গত ঈদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা রাখা নিয়ে এত আলাপ তুললাম, যারা হলে থাকবে (প্রায় ৬৪ জন) তাদের তালিকা করলাম, হল খোলা রাখার হাজারটা যৌক্তিকতা দেখালাম- তবুও প্রশাসন তোয়াক্কাই করেনি।
তিনি লিখেন, প্রশাসনের এ আচরণগুলোকে ফ্যাসিজম বললে তারা আবার আমাদের নামে তদন্ত কমিটি গঠন হবে। আসলে প্রশাসন আর কিছুর রোডম্যাপ দিক আর না দিক, তারা পূর্ণাঙ্গ ফ্যাসিস্ট হয়ে যাওয়ার রোডম্যাপ দিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করলেও অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা, এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়েরও কিছু শিক্ষার্থী চাকরির প্রস্তুতি ও অন্যান্য কারণে হলে অবস্থান করতে চায়। হল খোলা রাখার এমন অনেক প্রাসঙ্গিক কারণ রয়েছে।
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, জীবনযুদ্ধে একজন শিক্ষার্থী যখন খুব খারাপ সময় মোকাবিলা করে, তখনই মূলত তিনি পরিবার, আত্মীয়স্বজন ব্যতিরেকে একাকী ঈদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময়টা তাদের জন্য কতটুকু উপভোগ্য করা যায়- সে বিষয়ে হল প্রশাসনের পেরেশানি থাকা দরকার ছিল; কিন্তু উলটা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। এটা শুধু একজন শিক্ষার্থীর অধিকার ক্ষুণ্ণ নয় বরং অমানবিক আচরণও বটে। আমরা হল প্রশাসনকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ
প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক জামিরুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সিন্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে কথা বলতে পারেন। এগুলো কারও একার সিন্ধান্ত না।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হলের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবে সেখানে হলের একটা নিরাপত্তার বিষয় আছে। তবে যদি কোনো শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে চায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের কাছে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। প্রাধ্যক্ষ পরিষদ সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য,এর আগেও নিরাপত্তার অজুহাতে ঈদের ছুটিতে আবাসিক হল বন্ধ রাখতো তৎকালীন প্রশাসন। তবে ২০২২ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে, বেশ লম্বা সময় পর ঈদের ছুটিতে আবাসিক হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সেই সময়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। এরপর থেকে ঈদের ছুটিসহ কোনো ছুটিতেই আবাসিক হল বন্ধ করেনি প্রশাসন।
সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন গত বছরের ১৬ জুলাই আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন প্রশাসন এবং গত ঈদুল আজহাতেও শিক্ষার্থীদের দাবিকে তোয়াক্কা না করে ৭ দিন হল বন্ধ রাখেন বর্তমান প্রশাসন।