জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, সাতচল্লিশের স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এগুলো একই ধারাবাহিকতার অংশ, যার মাধ্যমে আমরা মানবিক মর্যাদা সম্পন্ন, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ পেয়েছি।”
২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে আমাদের সামনের সম্ভাবনাগুলো নষ্ট করা উচিত নয়। বর্তমানে একদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এক ধরনের নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ন্যায়বিচার ও সংস্কারের প্রসঙ্গ উপেক্ষিত, অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলোর পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা চলছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এসব অন্যায় প্রতিহত করবে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা জীবন দিয়েছেন। ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং অধিকার রক্ষার জন্য আমরা বারবার রক্ত দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করা, যেখানে জনগণকে আর রক্ত দিতে হবে না।”
একই দিনে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসই প্রমাণ করে যে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে কিছু নেই। যারা এমন কথা বলছেন, তারা স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব খাটো করতে চাচ্ছেন।”
এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “একাত্তর ও চব্বিশ একে অপরের বিপরীত নয়। বরং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানই একাত্তরের চেতনার পুনর্জাগরণ। একাত্তরের সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল সাম্য, যা আজও অর্জিত হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর বাংলাদেশে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল, তাই আরেকটি গণ–অভ্যুত্থান প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যারা একাত্তর ও চব্বিশকে পরস্পরবিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করছেন, তারা প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারেননি।”
দেশে কোনো সংস্কার ও ন্যায়বিচার ছাড়া নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হলে তা মেনে নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যদি নির্বাচন করা হয় এবং তাতে কোনো প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার না থাকে, তবে সেটি অবশ্যই আমরা মেনে নেব না।”
গণ–অভ্যুত্থানের পর গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ঐক্যে কোনো ফাটল ধরেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্যের যে ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, আমরা এখনো সেটিতেই আছি। তবে বিভিন্ন দলের এজেন্ডা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু আমাদের যদি সত্যিই জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে ভিন্ন মতামত থাকা সত্ত্বেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যদি কেউ গণ–অভ্যুত্থানের মূল চেতনা থেকে সরে যায়, তবে তাদের সঙ্গে ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব হবে না।”