জুলাইয়ের প্রথম থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন জুলাইয়ের মাঝামাঝি এসে রীতিমত যুদ্ধে রুপ নেয়। সাধারন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নৃশংসতায় বদলে যায়। একে অন্যকে আহত এবং ক্ষতিগ্রস্থ করার মানসিকতায় মেতে ওঠে প্রত্যেকে। যাতে মানুষ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। আন্দোলনকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে একদল মানুষ চেষ্টা করছে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে। পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সুযোগে তারা পুলিশ এবং সাধারন মানুষ উভয়েরই ক্ষতি করেছে।
১৮ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশে চলেছে অরাজক পরিস্থিতি। তারই সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর, গোলাগুলি এবং মানুষের প্রাণহানি ঘটায় স্বার্থন্বেষী মহল। এর মধ্যে উল্লে্যখযোগ্য মহাখালী ডাটা সেন্টারে আগুন লাগানো হয়, যার জন্য প্রায় ৫ দিন দেশে সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিটিভি ভবনে আগুন লাগায় দুবৃত্তরা যাতে করে অন্তত ১২ ঘন্টা বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ ছিল। মিরপুর কাজিপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আগুন লাগায়। নরসিংদীর জেলা কারাগারে আগুন দেয় দুবৃত্তরা। এর সুযোগ নিয়ে গেট ভেঙ্গে ৮২৬ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কিছু গুরুতর অপরাধীরাও এর সুযোগ নিয়ে পালিয়ে যায় যাদের মধ্যে উল্লে্যখযোগ্য আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের ৬ সদস্য ও জিএমবি এর দুই নারী সদস্য।
এর মধ্যেই ২১ জুলাই কোটা সম্পর্কিত হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাতিল করা হয় সঙ্গে আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ করে কোটা নির্ধারণ করে। তারপরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে গেলে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দেশে কার্ফিাউ জারি করা হয় এবং নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়। তবে বর্বরতা তখনই চরমে ওঠে যখন মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করা হয় না এবং তার সাথে পশুর মত আচরণ করা হয়। আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যেকার সংঘর্ষে এমনই বর্বরতার প্রকাশ ঘটে। প্রধানমন্ত্রী ২৬ জুলাই তার দেয়া একটি ভাষনে বলেন “তিনি কাউকে রাজাকার বলেন নি, তার বক্তব্য বিকৃত করে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বিরোধী দলীয় শক্তি।”
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেখা গিয়েছে রাজাকার হওয়ার অপরাধে অনেককেই অমানবিক শাস্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এবারের নৃশংসতা তার থেকে কম ছিল না। এমনও দেখা গিয়েছে যাত্রাবাড়িতে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে তার লাশ ফুট ওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য প্রধান সড়ক গুলোতে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা আরোও বাড়ানো হয়েছে। কারফিউ শিথিলের সময়টায় যান চলাচলও থাকে স্বাভাবিক। এই সময়ে এসে দেশের পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নই সকলের একান্ত কাম্য।