জমিয়েত উলেমায়ে হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটি সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানির নেতৃত্বে নয়াদিল্লির আইটিওর মাদানি হলে রবিবার এক জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে। এই সভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সংশোধিত ওয়াকফ আইন, ২০২৫, উত্তরাখণ্ডে মাদ্রাসাগুলির বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউসিসি আরোপ ও গাজার পরিস্থিতি। এই কমিটি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং সংগঠনে সদস্য বৃদ্ধির দিকে জোর দিয়েছে।
গোটা দেশ থেকে বহু প্রতিনিধি ও বিশেষ আমন্ত্রিতরা এই সভায় যোগ দেন। ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষার বিষয়ে জমিয়েত কী ভাবছে, তার একটা বিস্তারিত খতিয়ান প্রথমে তুলে ধরা হয়। ওয়ার্কিং কমিটি নির্দিষ্ট ভাবে সংশোধিত ওয়াকফ আইন, ২০২৫-কে বাতিল করে একটি প্রস্তাব পাশ করে বলেছে, এই আইন ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১, ২৫, ২৬, ২৯ ও ৩০০-এ ধারাসহ একাধিক ধারাকে লঙ্ঘন করছে। এই আইনের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল, ‘’ওয়াকফ বাই ইউজার’-কে বাতিল করা। এর ফলে হাজার হাজার ঐতিহাসিক ধর্মস্থল বিপদের মুখে পড়তে চলেছে। সরকারি রিপোর্ট মোতাবেক সংখ্যাটি ৪ লক্ষেরও বেশি।
এই আইন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডগুলি অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে যা ধর্মীয় বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ ও সংবিধানের ২৬ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি সংখ্যাগুরুবাদী আধিপত্যবাদের নিকৃষ্ট নজির এবং একে জোরালো ভাবে নিন্দা করা হয়েছে। কমিটি বলেছে, ওয়াকফ ইসলামি আইনের একান্ত অপরিহার্য অংশ এবং এক ধরনের ধর্মীয় ইবাদত বা উপাসনা। ওয়াকফের ধর্মীয় ও আইনি সারমর্মকে খর্ব করতে ইচ্ছুক যে কোনও আইনই অগ্রহণযোগ্য। সংশোধন যদি করতেই হয় তাহলে তা শুধুমাত্র প্রশাসনিক দিকেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
শাসক দল, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও অপপ্রচার ছড়ানো সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে বলে ওয়ার্কিং কমিটি এই অপশক্তিগুলিকে তীব্র ভাবে নিন্দা জানিয়েছে। সত্যকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে নিজেদের দায়বদ্ধতার কথা জানিয়েছে কমিটি। তারা আরও বলেছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন একটা সাংবিধানিক অধিকার এবং এই আন্দোলনকে দমন করতে বাহিনীর ব্যবহার নিন্দাযোগ্য। তবে, বিক্ষোভের সময় ঘটা সহিংসতা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছে কমিটি। তারা জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা ওয়াকফ রক্ষা আন্দোলনকে দুর্বল করবে।
উত্তরাখণ্ড সরকার ইসলামি মাদ্রাসাগুলিকে জোর করে বন্ধ করে দেওয়ায় এই কমিটি জোরালো সমালোচনা করে বলেছে, এই পদক্ষেপ সংবিধানের ৩০ ধারাকে সরাসরি ভাবে লঙ্ঘন করছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সাংবিধানিক বিধিনিয়মকে বহাল রেখেছে। জমিয়েতের দাবি, সিল করা মাদ্রাসাগুলিকে অবিলম্বে খুলে দিতে হবে। পাশাপাশি তারা সতর্ক করেছে, সরকার যদি এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু ও মুসলিম পার্সোনাল ল’কে খর্ব করার অপচেষ্টা নিয়ে গুরুতর ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অমান্য করে একাধিক রাজ্য সরকার বুলডোজার চালিয়ে ধ্বংস চালাচ্ছে এবং এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি। আদালত স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে, কোনও রকম ভাঙচুরের আগে যথাযথ বিজ্ঞপ্তি ও শুনানিসহ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মানতে হবে। এই সব রক্ষাকবচগুলিকে উপেক্ষা করছে সাম্প্রতিক পদক্ষেপ, নির্দিষ্ট ভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিশানা করতেই এগুলি করা হচ্ছে। এরই সঙ্গে, গাজায় ইসরাইলি অত্যাচার ও বর্বরতা নিয়ে এই কমিটি উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইসরাইলি এই নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে অভিহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মাওলানা মাদানিসহ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা হাকিমুদ্দিন কাসমি, মাওলানা মহম্মদ সালমান বাজনোরি, মুফতি আহমেদ দেভলা, মুফতি সৈয়দ মহম্মদ সালমান মনসুরপুরি প্রমুখ।