বিতর্কিত ওয়াকফ বিল ২০২৫ (সংশোধনী) ইস্যুতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রমশ অশান্ত হয়ে উঠেছে। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবারও (১২ এপ্রিল) সেখানে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত নিহত হয়েছেন ৩ জন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যে ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন প্রয়োগ করা হবে না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। বিক্ষোভকারীরা মুর্শিদাবাদের রাজপথ ছাড়তে নারাজ।
মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, সামসেরগঞ্জ, রতনপুর, জঙ্গিপুর, সূতি ও হিজলতলা এলাকাগুলি কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভকারীরা বোমা ছুঁড়েছে, বাড়িঘর ও দোকানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। রেল সংক্রান্ত স্থাপনাতেও হামলা হয়েছে—রেলের রিলে রুম এবং রেলগেট ভাঙচুর করা হয়েছে। এমনকি বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সামসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জ এলাকায় ভয়াবহ হামলার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পাশাপাশি, শুক্রবার পুলিশের গুলিতে আহত হওয়া এক কিশোরেরও শনিবার মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে মুর্শিদাবাদে তিনজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হয়েছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জরুরি ভিত্তিতে মামলা করেন রাজ্যের বিরোধী নেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। শুনানির পর বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগেই অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএসএফ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছিল।
ঘটনার জন্য রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছে। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির মন্তব্য করেন, পুলিশ যদি সক্রিয় থাকত, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তিনি দাবি করেছেন, সংঘর্ষে নিষিদ্ধ সংগঠনের লোকজন সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।
এদিকে, কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, রাজ্যে পুলিশ প্রশাসনের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি অবিলম্বে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির দাবি তুলেছেন। শুভেন্দু অধিকারীও ঘটনার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেছেন।
রাজ্যের পুলিশপ্রধান রাজীব কুমার শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আইন ভঙ্গকারী ও দুষ্কৃতিকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সমস্ত পক্ষকে সংযম বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন।
সারা রাজ্যের নজর এখন মুর্শিদাবাদের দিকেই, পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সে দিকেই সকলের অপেক্ষা।