গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক কর্মকর্তাকে ল্যান্ডফোনে প্রাণনাশের হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে অব্যাহতি পাওয়া বিভাগের সাবের সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে।
বুধবার দুপুরে এঘটনা ঘটে। পরে কর্মকর্তা তার নিরাপত্তার জন্য নগরের মতিহার থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। অভিযোগ করা কর্মকর্তার নাম রেজাউল করিম হাওলাদার (৫৮)। তিনি বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত আছেন।
জিডিতে রেজাউল করিম হাওলাদার উল্লেখ করেছেন, বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের স্ত্রী নুসরাত পারভীন শান্তা ভাবী বিভাগের অফিসে আসেন। তিনি আমার হাতে স্যারের (অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি পত্র দিয়ে বলেন, ‘আপনার স্যার আপনাকে সভাপতির কাছ থেকে এটি রিসিভ করিয়ে দিতে বলেছেন।’ তখন আমি তাকে জানাই, ‘ভাবি, এটা তো সভাপতি স্যারকে লেখা পত্র। আর সভাপতি স্যার আজ ছুটিতে আছেন। আপনি আজকে রেখে যান। সভাপতি স্যার অফিসে এলে আমি তাকে দিয়ে রিসিভ করিয়ে পিয়নের মাধ্যমে রিসিভ কপি পাঠিয়ে দিব।’
এরপর ভাবি আমার কাছে জানতে চান, ‘বিভাগে টাকা-পয়সার ব্যাপারে কী হয়েছে। আপনাদের স্যার তো সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন।’ তখন আমি তাকে জানাই, বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেছেন, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ এ যাবৎ পর্যন্ত ১০ লাখ নাকি ২০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন, তা তো আমি জানি না। তাকে সব জমার তালিকাসহ রসিদের ফটোকপি সংযুক্ত করে সভাপতি বরাবর জমা প্রদান করতে বা পাঠাতে বলবেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম সাইফুল ইসলাম স্যার এর সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে অফিস ত্যাগ করেন। তিনি অফিস ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে অফিসের ল্যান্ডফোনে কল এলে আমি নিজেই তা রিসিভ করি। ফোন রিসিভ করার পর ফোনের অপর প্রান্ত থেকে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ আমার কণ্ঠ শোনা মাত্রই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।’
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তরের কয়েকদিন পর বিভাগের অফিস কক্ষে ঢুকে কয়েকজন সহকর্মীর সামনে আমাকে হুমকি প্রদান পূর্বক বলেন যে, তোকে যদি জেলের ভাত খাওয়াতে না পারি, তবে আমার নাম মুসতাক না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল করিম হাওলাদার বলেন, ‘ বিভাগ থেকে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ যে টাকা-পয়সা নিয়েছেন সেগুলো সমন্বয় করার কথা বললে আমি রাজি না হওয়াতে তিনি আমাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। আমার নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছি।’আমি এখন কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ ঘটনাটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিভাগের অভ্যন্তরীণ কিছু কতিপয় ব্যক্তি আমার অ্যাকাডেমিক অবস্থান ও সুনাম নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। কিছু সুযোগ সন্ধানী ৫ আগস্টের পর অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই বিষয়গুলো করে যাচ্ছে।’ আমি সভাপতিত্ব ছাড়ার ৩ মাসে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠেনি কিন্তু এখন এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে তারা এসব করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মতিহার থানার ওসি মো. আব্দুল মালেক বলেন, আমরা অভিযোগ পত্রটি হাতে পেয়েছি। এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ছাত্রলীগ নেতাকে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র প্রদান, অ্যাকাডেমিক পরিসরে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।