রাজধানীর কাওরান বাজার রেললাইনের দুপাশে অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। যাদের উপার্জন অনেক সীমিত। আবার এই সীমিত উপার্জনের জন্য নির্ভরশীল থাকতে হয় কাওরান বাজার মাছের আড়তের উপরেই। মাছ কেটে কিংবা মাছের নাড়িভুঁড়ি থেকে তেল বের করে সেগুলো বিক্রি করেই সংসার চালান রেললাইনের দুপাশের বস্তিতে বসবাস করা এসব মানুষ।
রেললাইনের পাশে বসবাস করা যেমন বিপদজনক তেমনি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা এদের কাছে আরও দুর্বিষহ। চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক এখানকার নিত্যদিনের চিত্র। এসবের মাঝেও কিছু মানুষ উপার্জনের আশায় কাক ডাকা ভোরে বটি নিয়ে বসে থাকেন মাছ কাটার জন্য। প্রতি কেজি মাছ কেটে পান ১০ টাকা। এভাবে ১৫/১৬ ঘন্টা মাছ কেটে আয় করেন মাত্র ৪০০/৫০০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বী দামের কাছে এদের আয় অতি অল্প।
প্রায় ৪ বছর ধরে রেললাইনের পাশে মাছ কাটেন আব্দুল করিম। তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি আমাদের জানান। মাছ কেটে তার দৈনিক আয় ৫০০/৬০০ টাকা। যা দিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। এই আয় থেকে আবার ১০০ টাকা জায়গার ভাড়া দিতে হয় স্থানীয় প্রভাবশালীদের। আব্দুল করিম জানান স্থানীয় প্রভাবশালীরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত যার ফলে ১০০ টাকা না দিলে আবার জায়গা পাবেন না তিনি। তবে প্রশ্ন থেকে যায় রেললাইনের পাশের জায়গা যদি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের হয় তাহলে ভাড়া তুলে কোন প্রভাবশালীরা? এদের পরিচয়ই বা কি?
রেললাইনের অন্যপাশে দেখা যায় মধ্যেবয়সী এক নারী মাছের নাড়িভুঁড়ি থেকে তেল তৈরিতে ব্যস্ত। যারা মাছ কাটেন তাদের থেকে ফেলে দেওয়া নাড়িভুঁড়ি সংগ্রহ করে এভাবে গরম পানিতে ফুটিয়ে তেল বের করে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। প্রতি কেজি তেল বিক্রি করলে পান ৬৫ টাকা। সারাদিনে চার থেকে পাঁচ কেজি তেল বিক্রি করেই চালান সংসার।
এদের সীমাহীন কষ্ট আর দুর্ভোগ যেনো সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধে এরাই যেনো প্রকৃত যোদ্ধা।