আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন কাগুজে নোট বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল সোমবার (২৬ মে) থেকে তিন ধরনের নতুন নোট ধাপে ধাপে বাজারে ছাড়া হবে। এসব নোটে কোনও ব্যক্তির ছবি থাকবে না; বরং এতে স্থান পাবে দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রাকৃতিক দৃশ্য।
জানা গেছে, ২৭ মে বাজারে আসবে ২০ টাকার নোট, যেখানে দেখা যাবে কান্তজিউ মন্দির ও একটি বৌদ্ধমন্দিরের ছবি। এরপর ২৯ বা ৩০ মে আসবে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষ চিত্র এবং আতিয়া মসজিদের ছবি সম্বলিত ৫০ টাকার নোট। সবশেষ ২ জুন মুক্তি পাবে বঙ্গভবন ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি সংবলিত ১০০০ টাকার নোট।
তবে ঈদের আগে ৫ টাকার নোট আসছে না। ইউরোপ থেকে কাগজ সরবরাহে বিলম্বের কারণে এতে থাকা আবু সাঈদ ও মুগ্ধের অবয়বসংবলিত এই নোট ঈদের পর ছাড়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, নতুন নোটগুলোর ডিজাইন সম্পূর্ণভাবে চূড়ান্ত হয়েছে এবং কিছু নোটের ছাপাও শুরু হয়েছে। এবারের নোটগুলোতে মানুষের ছবি রাখা হয়নি। তবে এতে থাকছে ঐতিহ্য, তারুণ্য, প্রকৃতি ও ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ৫ টাকার নোটে থাকছে আবু সাঈদ ও মুগ্ধের ছবি, ১০ টাকায় দেখা যাবে তারুণ্যের প্রতীক ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ১০০ টাকার নোটে থাকছে সুন্দরবনের বাঘ ও চিত্রা হরিণ, যা রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে ধরা হচ্ছে, ২০০ টাকায় থাকবে চার ধর্মীয় উপাসনালয়—মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডা, আর ৫০০ টাকার নোটে দেখা যাবে ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ২০, ৫০ এবং ১০০০ টাকার তিনটি নতুন নোট ঈদের আগে বাজারে আসছে। এগুলোতে কোনো মানুষের ছবি না থাকলেও, দেশের ঐতিহাসিক ভবন, প্রাণী ও প্রাকৃতিক নিদর্শন স্থান পেয়েছে। ধর্মীয় স্থাপনার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঐতিহাসিক দিককে—মসজিদ, মন্দির বা অন্যান্য উপাসনালয় সবই থাকছে।
গত বছর আগস্টে খুব দ্রুত নতুন নোট ডিজাইনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি সময় সংকটে। কারণ ডিজাইন, কাগজ আমদানি, নিরাপত্তা উপকরণসহ সবকিছুতেই আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব দরকার হয়। দরপত্র প্রক্রিয়াসহ পুরো কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ৫ থেকে ৭ মাস।
নতুন নোটগুলো প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস ও শাখাগুলোতে সরবরাহ করা হবে, পরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ হবে। তবে ঈদের ছুটির আগ মুহূর্তে সীমিতসংখ্যক নোট বাজারে আসতে পারে, কারণ চাহিদার তুলনায় ছাপা নোটের পরিমাণ তুলনামূলক কম।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ প্রথম নিজস্ব ১ টাকার নোট চালু করে। এরপর ধাপে ধাপে ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ এবং সর্বশেষ ১০০০ টাকার নোট চালু হয় ২০০৯ সালে।