মাছে-ভাতে বাঙ্গালির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইলিশ। গত এক যুগে বাংলাদেশের জাতীয় এই মাছের উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হলেও বাজারে সরবরাহ বেড়ে এর দাম কমেনি।
বরং একই সময়ে উৎপাদনের মতো দামও বেড়ে হয়েছে কয়েক গুণ। আর সাধারণ মধ্যবিত্তের খাদ্য তালিকা থেকে বিদায় নিয়েছে ইলিশ। মাছটির ওপর এখন একচেটিয়া অধিকার তৈরি হয়েছে অভিজাতদের।
অথচ একসময় সাধারণ মধ্যবিত্তের পাতে ছিল ইলিশের নিত্য আনাগোনা। একেবারে নিম্নবিত্তেরও নাগালের বাইরে ছিল না ইলিশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইলিশের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হয়ে এসেছে। একই সঙ্গে মাছটি হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনীতির হাতিয়ার। দুই দেশের কূটনীতিতে ইলিশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও তা থেকে দেশের সাধারণ মানুষের খুব একটা উপকার হয় না
সাবেক সরকারের সঙ্গে ভারতের সখ্যতা বেশি থাকায় ইলিশ রপ্তানির পাশাপাশি উপহার হিসেবেও যেতো প্রতিবেশী দেশের কাছে।
তবে অন্তরবর্তী সরকার গঠনের পর ভারতে ইলিশ রফতানি করা হবে না— এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানি হয়েছিল প্রায় ৬৬৫ টন। যা এবারে বেড়ে চার গুণ ছাড়িয়েছে। দেশের বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ ১৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকা বিক্রি হলেও ভারতে কেজিপ্রতি ১২০০ টাকা মূল্যে রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ।
দেশেও এখন মাছটির দাম কমার পরিবর্তে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় আবার দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মাছ ভারতে পাঠাতে উদগ্রীব একদল অসাধু। যা বন্ধে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।
প্রযুক্তির এই যুগে ইলিশের প্রজনন, সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। বায়োফ্লক প্রযুক্তি এবং আধুনিক মৎস্য চাষ পদ্ধতি ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। ইলিশের প্রজননের জন্য পদ্মা-মেঘনার মোহনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই এসব অঞ্চলের পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর আরও উদ্যোগী হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইলিশ মাছের সম্ভাবনা অসীম। ইলিশের আন্তর্জাতিক বাজার দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। শুধু ভারত নয়, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও বাংলাদেশের ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকার যদি এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে, তবে ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং আন্তরিকভাবে কূটনৈতিক আলোচনা।