কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ‘১১ জুলাই প্রথম প্রতিরোধ দিবস’ শীর্ষক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্ছ প্রাঙ্গণে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমাইয়া আফরীন সানি এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ’র সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী।
বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ এবং শিক্ষকরা মিলে উপদেষ্টাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্ছের পাশে ‘জুলাই মিনার’ এর উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ১১ জুলাইকে ‘প্রথম প্রতিরোধ দিবস’, কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় ‘প্রতিরোধ মিনার’ স্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি বাস দেওয়ার ঘোষণা দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, ‘প্রথমেই স্মরণ করছি জুলাই যোদ্ধাদের। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি জানিয়েছে, আশা করি এই দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে।’
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘আমাদের আহত ছাত্ররা যে দাবিগুলো তুলেছে, আমরা তাদের সাথে একমত। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে প্রতিটি সীমাবদ্ধতা কীভাবে অতিক্রম করা যায় সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে। গত ১৬ বছরের স্বৈরাচার উৎখাত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের ছাত্রজনতা ও যুবসমাজের মধ্যে যে উপলব্ধিকে জন্ম নিয়েছে সেই উপলদ্ধিকে বুকে ধারণ করে এবং পালন করে আমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ হব। আমি আশা করি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্যাগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, ‘প্রথমেই মাননীয় উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ রাখছি আমাদের শিক্ষার্থীদের আবেগের জায়গা ১১ জুলাই যেন স্বীকৃতি পায়। এই কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি বৃহত্তর সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেওয়ার প্রেক্ষাপট দীর্ঘদিনে তৈরি হয়েছে। সর্বত্র গুম, হত্যা, জুলুম, নির্যাতন ইত্যাদি এর প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছে। মূলত নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যখন নির্মম ভাবে দমন করা হয় তখনই ছাত্রদের মধ্যে সরকার বিরোধী মনস্তাত্তিক ঐক্য তৈরি হয়। ২৪ এর কোটা আন্দোলন সেই ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করে এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত করে। জুলাই আন্দোলন অন্যান্য ছাত্র আন্দোলন থেকে ভিন্ন কারন এই আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল বৈষম্যহীনতা ও ন্যায়প্রতিষ্ঠা। এই আন্দোলনে যে পরিমানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ঘটনা গঠেছে পৃথিবীতে অন্য কোথাও এইরকম ঘটনার নজির নেই। এই হত্যার সাথে জড়িত সকলকে যদি বিচারের আওতায় না আনা হয় তাহলে পরবর্তীতে আরও বড় স্বৈরাচারের অভ্যুত্থান ঘটতে পারে। আরেকটা বিষয়, যে ঐক্যের ভিত্তিতে এই আন্দোলনটা পরিচালিত হয়েছে এবং দলমত নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়েছে সেই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিয়ে নতুন করে এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলনের সফলতার পিছনে শুধুমাত্র ক্রেডিট যায় আমাদের এই আন্দোলনের শহিদদের প্রতি যারা আমাদের সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এবং শহিদ হওয়ার যে মহানুভবতা তা শিখিয়েছেন। সারা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে রাজপথে নেমে এসেছেন এবং সতেরো বছর ধরে চলে আসা স্বৈরাচারী সরকার থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছেন।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘আজকে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন এটাই জুলাই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় সম্মাননা। উনি যেসব ঘোষণা দিয়েছেন, প্রত্যেকটি ঘোষণাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর ছাত্রদের দাবির বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করতে চাই, প্রথমত আমরা ১১ জন গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের সকল ডেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই এগারোজন শিক্ষার্থীর কেউ কোন সহযোগিতা পায়নি। আশা করি মাননীয় উপদেষ্টা বিষয়টা দেখবেন এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বাঁধা প্রদানকারী সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। আপনারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। তাহলেই আমরা সুষ্ঠু বিচার করতে পারব।’