দীন ইসলাম: ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক নেটওয়ার্কের মৌন মিছিলে অংশ নিয়েছিল স্কুল-কলেজের কিছু শিক্ষার্থী। মিছিল শেষে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে টেনেহিঁচড়ে আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। তখনই সাহসিকতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করেন রাবির কয়েকজন অধ্যাপক।
তাদের মাঝে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি ও একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেলিম রেজা নিউটন নেটজুড়ে তার সাহসিকতার আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
এসময় সেলিম রেজা নিউটন বলেন, “আমি দেখলাম একদল গুন্ডা এসে আমার ছাত্রদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি ও আমার সহকর্মীরা তাদের হাত থেকে শারীরিক দস্তাদস্তি করে ছাত্রদের রক্ষা করি। মনে রাখতে হবে এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা যতদিন বেঁচে আছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা হতে দেওয়া হবেনা। এখানেই এর শেষ না, কারা এরা? এই বাহিনি কারা? আমি এর জবাব চাই। আমি এদের পরিচয় চাই। আমি চাই মিডিয়া এর খোঁজ নিবে এটা কি বাংলাদেশের কোনো আর্মি? বাংলাদেশের কোনো বাহিনী? বৈধ বাহিনী? নাকি অবৈধ কোনো বাহিনী নিয়ে এসে আমার ছেলেমেয়েদের তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে? এটা কোন বৈধ সরকারের আচরণ হতে পারেনা।
তাছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত ৩১জুলাই রাবির ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হলে ৯ঘন্টা অবস্থান করে তাদের ছাড়িয়ে আনেন রাবির শিক্ষকরা। তাদের মাঝে সেলিম রেজা অন্যতম।
সেদিন রাত ১টার দিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি এক প্রতিবাদী অবস্থানের জানান দিয়ে লিখেছেন, সাড়ে ৯ ঘণ্টা থানায় অবস্থান করার পর অর্ক আর মাজেদকে মুক্ত করে নিয়ে থানা থেকে বের হয়েছি এই পনের মিনিট আগে। এখন বাসায় ঢুকলাম। ইংরেজি বিভাগ, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ফোকলোর এবং গণযোগাযোগ বিভাগের সহকর্মীরা পুরো সময় থানায় ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, উপাচার্য মহোদয় এবং প্রক্টর কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা করেছে।
মানবজমিন পত্রিকায় ২৮জুলাই প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য ছিল। একটি সর্বগ্রাসী সরকার প্রায়ই যুক্তিযুক্ত এবং শান্তভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, বিশেষ করে যখন সেই সরকার একটি গণ প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়। কারণ তা শাসনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।’
কোটা আন্দোলনেই তিনি নিজের সাহসিকতার পরিচয় দেননি। তার অতীতেও অনেক ঘটনা রয়েছে। ‘আশীর দশকের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের আগাগোড়ায় রাস্তায় ছিলেন তিনি। জরুরি আইন অমান্য করার দায়ে জেল খেটেছেন ২০০৭ সালে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার প্রশ্নে।
সেলিম রেজা নিউটন ১৯৬৮ সালে নিলফামারির সৈয়দপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন ১৯৯৪ সাল থেকে। এক সময় সিপিবির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।
সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘মানুষ’ সম্পাদনা করেন। ‘গণমাধ্যম পরিবীক্ষণের সহজ পুস্তক’, ‘নয়া মানবতাবাদ ও নৈরাজ্য’, ‘অচেনা দাগ (সম্পর্ক স্বাধীনতা সংগঠন)’, গণমাধ্যম পরিবীক্ষণের সহজ পুস্তুক, অভ্যাসের অন্ধকার, অমার মতো ট্রমার মতো, নিউটনের ছেলেবেলা, ভবিষ্যতের সরকার নোয়াম চমস্কি(অনুবাদ) ও পরিস্থিতির বিবরণতাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই।
রাতুল