কোপা আমেরিকা ফাইনাল, অন্যান্য ফাইনালের চেয়ে এ ম্যাচটি ছিল আর্জেন্টাইন ভক্ত অনুরাগীদের জন্য অন্যরকম এবং অনেকটাই আবেগের। দলের প্রধান আকর্ষণ এবং কিংবদন্তি মেসির এটি ছিল শেষ কোপা আমেরিকার জন্য খেলা সাথে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ডি মারিয়ারও এটি ছিল আর্জেন্টাইন জার্সিতে শেষ ম্যাচ। এসবকে কেন্দ্র করেই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে শেষ ম্যাচে খেলেছে দলটি এবং ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। তবে লাউতারো মার্টিনেজ এর খেলা এই বিশেষ ম্যাচটিকে আরোও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। লাওতারো মার্টিনেজ ১১২ মিনিটের মাথায় একমাত্র গোল করে আর্জেন্টিনার পক্ষে এবং সেটিই তাদের দ্বীতিয়বারের মত কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন করে তোলে।
কোপা আমেরিকার ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯১৬ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। এই বছরের ২০ জুন থেকে ১৪ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোপার ৪৮তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ম্যাচগুলোতে উরুগুয়ে ১৬ বার আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ১৫ বার, ব্রাজিল ৯ বার এছাড়াও প্যারাগুয়ে, চিলি, পেরু দুই বার করে এবং কলম্বিয়া ও বলিভিয়া দলগুলো একবার করে কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতে। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা সর্বোচ্চ ১৪ বার রানার্সআপ হয় এবং ব্রাজিল রয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চর তালিকায় যেটি ছিল ১২ বার।
আজকের এই ম্যাচটিতে অন্যান্য ব্যাতিক্রমের পাশাপাশি ম্যাচের শুরুতেই সমস্যা দেখা দেয়। কলম্বিয়ার উগ্র সমর্থকদের কারণে খেলা শুরু হতে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি হয়। কলম্বিয়ার সামর্থকরা টিকিট ছাড়াই মাঠে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকে।
খেলার শুরু থেকেই কলম্বিয়া আর্জেন্টিনাকে বেশ চাপের মধ্যে রাখে। হামেস রদ্রিগেজরা দলের হয়ে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকেন। অন্যদিকে আর্জেন্টিনাও কলম্বিয়াকে বেশ কয়েকবার হানা দিয়েছে।
মানসিকভাবে কিছুটা দূর্বলতা নিয়েই ম্যাচটি শুরু হয়েছিল আর্জেন্টাইনদের জন্য। তাই ম্যাচের প্রথমার্ধে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সেই আর্জেন্টিনার উপস্থিতি মাঠে তেমর লক্ষ্যনীয় ছিল না।
কলম্বিয়া ম্যাচের শুরুর দিকে গোলের প্রস্তুতি নিতে থাকতে। খেলার ৬ মিনিটের মাথায় অল্পের জন্য বেঁচে যায় আলবিসেলেস্তেরা। কলম্বিয়ার কর্ডোবার শটটি গোল পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। অল্পের জন্য গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। একটি গোলের প্রচেষ্টার ঠিক ৪ মিনিট পরে আবারও আক্রমণ চালিয়েছে কলম্বিয়া। কিন্তু সেই চেষ্টায়ও গোল করতে ব্যার্থ হয় দলটি।
২০ মিনিটে সতীর্থের পাস থেকে মেসি সরাসরি গোল পোস্টে শট নিয়েছিলেন। তবে এ যাত্রায় কলম্বিয়ার গোল কিপার দলকে বাঁচিয়ে দেয়। এর আরোও ৫ মিনিট পর লিসান্দ্রোকে আঘাত করে কর্ডোবাহলুদ কার্ড দেখান। এরপর আবার ৪৩ মিনিটে বল নিয়ে এগোচ্ছিলেন তাগলিয়াফিকো। বক্সের কাছাকাছি জায়গায় তাকে ট্যাকল করে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। এ থেকে বক্সের মধ্যে উড়িয়ে বল মারেন মেসি; সতীর্থের হেড চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। আক্রমণ এবং প্রতি আক্রমণের মধ্যে দিয়ে গোলশূন্য সমতায় প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও খেলাকে নিজের দিকে রাখতে সক্ষম হয়েছে কলম্বিয়া। বেশ কয়েকব আক্রমণেও গিয়েছে তারা। তবে খেলার ৫৮ মিনিটে গোল খাওয়া থেকে কোনো রকমে বেঁচে যায় কলম্বিয়া। বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে একেবারে প্রতিপক্ষের অংশে ঢুকে পড়েন ডি মারিয়া। গোলরক্ষক কামিলো ভারগাস তার দেয় এ শটটি বাঁচিয়ে দেয়।
ম্যাচের ৬৬ মিনিটে পায়ে ব্যাথা পেয়ে ভেজা চোখে মাঠ থেকে উঠে যান মেসি। ম্যাচের প্রথমার্ধেও ৩৫তম মিনিটে চোট পেয়েছিলেন অধিনায়ক। তিনি ভালভাবে খেলতেও পারছিলেন না। এমতাবস্থায় ৬৬ মিনিটে তাকে মাঠ থেকে উঠে যেতে হলো। এই কিংবদন্তি কে বেঞ্চে বসে অঝোরে কান্না করতে দেখা যায়।
মেসি উঠে যাওয়ার পর মানসিক শক্তির অভাবেই হয়তো ছন্নছাড়া খেলা খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। আক্রমণে উঠেও তার কোনো ফল পাচ্ছিলো না দলটি। ৮৭ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যেতে পারতো দলটি। ৯১ মিনিটের মাথায় গোল করার ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন ডি মারিয়া। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সেই সুযোগ নষ্ট হয়।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সময় গোলহীন ভাবে শেষ হয়। ফাইনালে সরাসরি টাই ব্রেকারের নিয়ম না থাকায় খেলার ৯০ মিনিট সমতায় শেষ হলে আরোও ৩০ মিনিট খেলা হবে ঠিক করা হয়।
অতিরিক্ত সময়েও এ কাঙ্খিত গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না কোনও দল। অবশেষে সেই কাঙ্খিত গোলটি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ১১২ মিনিটে এলো সেই আবেগী ম্যাচে জয়। মাঝমাঠ থেকে লাউতারো মার্টিনেজকে বল বাড়িয়ে দিলেন লো সেলসো। বক্সের ভেতে ঢুকে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান লাউতারো। তার এ্ই স্মরণীয় গোলের মধ্যে দিয়েই কোপা আমেরিকার ইতিহাসে আরেকবার আর্জেন্টিনার নাম লেখা হয়।