বিশেষ প্রতিনিধি: শিল্পনগরী খুলনার দৌলতপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাতক সাবেক কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলীকে মনোনীত করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গত ৯ এপ্রিল জারি করা এক আদেশে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি এডহক কমিটি অনুমোদন দিয়ে পলাতক এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি খুলনা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও ছিলেন।
প্রসঙ্গত, তিনি পূর্বে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান। অবসরের পরে তার বিরুদ্ধে বিএনপি অফিসে হামলা ও ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগে মামলা হয়, এবং তিনি বর্তমানে এসব মামলায় পলাতক অবস্থায় রয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৭ মার্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সভাপতি পদের জন্য তিনজনের নামের একটি প্রস্তাবনা পাঠান। এ তালিকায় ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সামসুল আলম, ব্যাংকার রেজাউল ইসলাম এবং শেখ মোহাম্মদ আলী। তবে বোর্ড থেকে শেখ মোহাম্মদ আলীকেই মনোনীত করা হয়।
এই বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. মো. কামরুজ্জামান জানান, সাধারণত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে পাঠানো তালিকার প্রথমজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়ে থাকে। তবে যেহেতু শেখ মোহাম্মদ আলী বর্তমানে মামলার পলাতক আসামি, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক তথ্য গোপন করে থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোহাম্মদ আলী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় একাধিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাদার সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিদ্যালয়ে তার উপস্থিতি ছিল খুব সীমিত। সেই সময় বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও ওঠে। অনিয়মগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই তিনি সভাপতির পদে আসীন হওয়ার তদবির করেন বলে অভিযোগ তাদের।
অন্য দিকে, শেখ মোহাম্মদ আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বিদ্যালয়টি আমি নিজ হাতে গড়েছি, তাই শিক্ষক ও এলাকাবাসীই আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। কারো ক্ষোভ থেকেই এসব অভিযোগ আসছে।” মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, শুনেছি আমি কিছু মামলা আছে, তবে আমি জামিন নেওয়ার চেষ্টা করিনি এখনও।
খালিশপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, শেখ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা রয়েছে এবং তাকে ধরতে একাধিক অভিযান চালানো হলেও সফল হওয়া যায়নি।
এ ঘটনা শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সমালোচনা চলছে নানা মহলেও। এখন দেখার বিষয়, শিক্ষা বোর্ডের তদন্তে কী ফল আসে এবং ভবিষ্যতে এই নিয়োগের বৈধতা নিয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।