গান পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। অনেক মানুষকে বলতেও শুনা যায়, গান না শুনলে ঘুম হয় না। গান শোনা ছাড়া থাকতে পারবো না। তবে, ইসলাম ধর্মে গান শোনার ব্যাপারে রয়েছে বিধি নিষেধ। ইসলাম ধর্মে মুসলিম জাতির জন্য গানকে হারাম করা হয়েছে। এতে রয়েছে আল্লাহর আজাব।
কুরআন হাদিসের আলোকে, শেষ জমানায় চলবে গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের রেওয়াজ, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিশাপ করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু বা ভূমিধস বা চেহারা বিকৃতির আজাবের। (তিরমিজি ২২১৩)
সুরা লুকমানে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “কত মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে আর আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সুরা লুকমান ৬)
গান-বাজনা সম্পর্কে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মানব জাতীকে অনেকবার সতর্ক করেছেন। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, “গান নিষেধ ও হারাম হওয়া সম্পর্কিত হাদিসগুলো মুতাওয়াতির। এই সম্পর্কে ১৩জন সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তারা হলেন, আবু মালিক আশআরী, সাহাল ইবনে সাদ, ইমরান ইবনে হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা, আবু উমামা আলবাহিলি, আয়েশা, আলী ইবনে আবী তালিব, আনাস ইবন মালিক, আব্দুর রহমান ইবন সাবিত, আল গাজী ইবনে রবীয়া ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুম।” (ইগাসাতুল লাহফান ১/২৬০)
এর মধ্যে কয়েকটি হাদিস হলো- ১। হযরত আবু মালিক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, “রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমণীদের গান বাজবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জমিনে ধসিয়ে দিবেন এবং তাদের কিছু লোককে বানর ও শূকর বানিয়ে দিবেন।” (ইবন মাজাহ ৪০২০, সহিহ ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮)
২। সাহল ইবন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অচিরেই শেষ যুগে দেখা দিবে ভূমি ধস, নিক্ষেপ ও বিকৃতি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসুল! তা কখন? তিনি বললেন, যখন বেশি হারে প্রকাশ পাবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকারা।” (ইবনু মাজাহ ২/১৩৫০)
৩। ইমরান ইবন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এ উম্মতের জন্য ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের আজাব রয়েছে। জনৈক মুসলিম ব্যক্তি তখন বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, কখন হবে তা? তিনি বললেন, যখন মদ্যপান দেখা দিবে ও গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে।” (তিরমিজি ২২১৫)
৪। আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, “রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরি শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। এবং বলেছেন, নেশা সৃষ্টিকারী প্রত্যেক বস্তুই হারাম।” (আবু দাউদ ৩৬৪৪)
৫। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যখন গনিমত (যুদ্ধে অর্জিত সম্পদ) ব্যক্তিগত সম্পদ বলে গণ্য করা হবে, যাকাতকে জরিমানা হিসেবে দেখা হবে, ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া জ্ঞান অর্জন করা হবে, পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে শোরগোল করবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হয়ে বসবে, নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজের নেতা হয়ে উঠবে, অনিষ্টের ভয়ে একজনকে সম্মান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে—তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি, পাথর বর্ষণের আজাবের জন্য এবং আরও আলামতগুলোর জন্য, যা পরপর নিপতিত হবে, যেমন একটি পুরনো হারের সূতা ছিঁড়ে গেলে একটার পর একটা দানা পড়তে থাকে।” (তিরমিজি ২২১৪)
বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত নাফে (রহ.) থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “একবার আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর দুই কানে আঙুল দিলেন এবং কিছু দূর গিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে নাফে! এখনো কি আওয়াজ শুনছো?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর যখন আমি বললাম, ‘এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না,’ তখন তিনি কান থেকে আঙুল সরালেন। তিনি বললেন, ‘একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন।'” (মুসনাদে আহমদ ৪৫৩৫; আবু দাউদ ৪৯২৪)