রুশাইদ আহমেদ: গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক-২০২৫ এর প্রতি সংহতি জানিয়ে রংপুরে মানববন্ধন করেছে বেশ কয়েকটি পরিবেশ, জলবায়ু ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রংপুর মহানগরীর প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এ মানববন্ধনে লাল সবুজ সোসাইটি, ভলিউন্টিয়ার ফর বিডি, ওএবি ফাউন্ডেশন, ইয়ুথ ফর নেক্সটজেন, ব্রাইটার্স ও রূপান্তরের সদস্যবৃন্দ এবং পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা অংশ নেন।
এ সময়, তাঁরা “জলবায়ু সুবিচার/এখানেই, এখনই!”, “পৃথিবী আগে/মুনাফা পরে”, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস/ক্লাইমেট জাস্টিস”, “পিপল/নট প্রফিট”, প্রভৃতি স্লোগান দেন। মানববন্ধনে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি ও কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বন্ধ করার দাবি জানান বক্তারা। কেননা তাঁদের মতে, এই খাতেই সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ হয়।
প্রতিটি বাজেটে জলবায়ুর জন্য আলাদা বরাদ্দ, যুব অংশগ্রহণ ও স্থানীয় সহায়তা নিশ্চিতকরণের গুরুত্বও তুলে ধরেন তাঁরা। পাশাপাশি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিডিয়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি করেন পরিবেশ কর্মীরা।
মানববন্ধনে ওএবি ফাউন্ডেশনের ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর তাসলিমা শেখ মিম বলেন:
❝ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে মালদ্বীপ পানির গর্ভে হারিয়ে যাবে। আমাদের পৃথিবীর ওজোন স্তরেরও ক্ষয় ঘটছে ব্যাপকভাবে। এ ছাড়া, রংপুর অঞ্চলের দিকে লক্ষ করলেও দেখা যায় মার্চ-এপ্রিল মাসেই তীব্র গরম পড়ছে। অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এখানে বৃষ্টির পরিমাণও দিনদিন কমছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছর পর এই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। অথচ বিগত বছরগুলোতে এই সমস্যা ছিল না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ক্রমশ এই জটিলতাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে।❞
মিম আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় উন্নত রাষ্ট্রগুলোর জলবায়ু কর দেওয়ার নিয়ম রয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। কিন্তু সকল রাষ্ট্র সেটা সঠিকভাবে দেয় না। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। তাই আমরা শঙ্কিত আজকের ‘আমি’ এবং আগামীর ‘আমি’-কে নিয়ে। সেই জায়গা থেকে তাই আমাদের চাওয়া জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে করা হোক কঠিন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।”
লাল সবুজ সোসাইটির আরমান হোসেন রুমান বলেন, “আমরা তরুণরা সকলেই অবগত আছি— জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে আমরা কীভাবে আমাদের পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বিশেষত যাঁরা মুনাফালোভী ব্যবসায়ী শ্রেণি রয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে তেমন সচেতন নন। ফলে আজ থেকে ১০ বছর পর আজকের পৃথিবী কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে তাঁরা চিন্তা করেন না। কিংবা সচেতন হলেও তারা এ বিষয়টির ওপর যথাযথ নজর দিচ্ছেন না।”
রুমান বলেন, তাই আমাদের দাবি জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব বড় বড় প্রভাবক আছে সেগুলো যেন দূরীভূত হয়। এবং সরকার ও বিশ্বনেতারাও যেন যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে এগিয়ে আসেন। ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার এবং কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবহার কমাতে তাঁরা যেন উদ্যোগী হন। বর্জ্য নিস্কাশনের প্রতিও তাঁরা যেন সুনজর দেন।
রুমান আরও যোগ করেন:
❝আমরা চাই, এই যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তা এখানেই থেমে যাক। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে আজ থেকে ১০-২০ বছর পর শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং গোটা বিশ্বকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আর সেই ভোগান্তি এড়ানোর প্রসঙ্গে সচেতন করতেই আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি।❞
ভলিউন্টিয়ার ফর বিডির কমিটি মেম্বার মো. শাহারিয়ার রিশাত বলেন, “আমরা যে পলিথিন ব্যবহার করি, তা পচনশীল নয়। আমরা তা জ্বালাতেও পারি না। ফলে এর ব্যবহার আমাদের পরিবেশকে ব্যাপকভাবে দূষিত করে। এর ফলেই আমাদের দেশে রোদের সময় বৃষ্টি কিংবা বৃষ্টির সময় রোদের দেখা পাওয়া যায়। এ কারণে আমরা ক্ষতির সম্মুখীনও হই। তাই আমরা সাধারণ নাগরিকরা যদি এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হতে পারি, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারব।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল থেকে গ্রেটা থুনবার্গ ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্বের তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার করতে এক উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবেই কয়েক বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক।