সত্যজিৎ রায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক, যার ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্রটি আজও প্রাসঙ্গিক। চুয়াল্লিশ বছর আগের এই সিনেমায়, রায় স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন। সিনেমাটি গুপী-বাঘার দ্বিতীয় অভিযান, যেখানে তারা ‘হীরক রাজার দেশে’ গিয়ে রাজার নির্মম অত্যাচারের মুখোমুখি হয়।
হীরক রাজা এক স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর শাসক, যিনি তোষামোদকারী ছাড়া আর কাউকে প্রশ্রয় দেন না। তার রাজ্যে হীরা থাকার পরও প্রজারা দারিদ্র্যে দিন কাটায়, চাষিরা অনাহারে থাকে, এবং শ্রমিকদের বেগার খাটায়। যারা রাজার অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, তাদের ‘যন্তর-মন্তর’ ঘরে নিয়ে গিয়ে মগজ ধোলাই করা হয়।
এতে তারা রাজার গুণগান গাইতে বাধ্য হয়, নিজেদের বিচার-বিবেচনা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। রাজা বিশ্বাস করে, শিক্ষা মানুষের মধ্যে সচেতনতা এনে দেয়, যা তার অত্যাচারী শাসনের জন্য বিপজ্জনক। তাই সে শিক্ষার পথ বন্ধ করে দেয়, পাঠশালাগুলো বন্ধ করে, এবং বইপত্র পুড়িয়ে ফেলে।
তবে বাইরে থেকে নিজের রাজ্যের শ্রীবৃদ্ধি দেখানোর জন্য রাজা অন্য রাজাদের নিমন্ত্রণ করে। গরিব প্রজাদের দুর্দশা যাতে কেউ না দেখে, সেজন্য তাদের বন্দি করে রাখে। নিজের অহমিকা প্রদর্শনের জন্য বিশাল মূর্তি গড়ে তোলার আয়োজনও করে।
কিন্তু গুপী-বাঘার আগমন ও তাদের উদয়ন পণ্ডিতের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ার পর, রাজার বিরুদ্ধে গণজাগরণের সূচনা হয়। রূপকথার আদলে গড়ে তোলা এই চলচ্চিত্রে, স্বৈরাচারী শাসকের পতনের মাধ্যমে সত্যের বিজয় উদযাপিত হয়।
এটি যেন ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে এক আশ্চর্য মিল রেখে তৈরি একটি চলচ্চিত্র, যা চুয়াল্লিশ বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পে এক নিদর্শন হয়ে রয়েছে।