আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে চাঁদাবাজি ইস্যুতে বিএনপিকে চাপে রাখতে চাইছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রনেতাদের দল এনসিপিও এ বিষয়ে সরব। তারা চাঁদাবাজি প্রশ্নে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে একই আসনে বসাতে চায়, দাবি করছে যে এই দুটি দল একই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা অবশ্য বলেছেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তারাও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে তারা এটাও উল্লেখ করেছেন যে ছাত্রনেতাদের দলেও চাঁদাবাজি আছে এবং সবার আগে নিজেদের আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা উচিত।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ অস্বস্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, কারণ দলের নেতাকর্মীদের নাম বারবার চাঁদাবাজির অভিযোগে উঠে আসছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারির বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিকবার বলেছেন, অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুরে যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুর নেতৃত্বে একটি দল স্থানীয় বাজারে চাঁদা দাবি করে। পিন্টু ঘোষণা দেন, যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং খাজনা তাকে দিতে হবে। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিএনপি দ্রুত তাকে বহিষ্কার করে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আল্লাহ চাঁদাবাজিকে হারাম করেছেন। ভিক্ষা করা হালাল। তাই চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা করুন।” এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “হাতবদল হয়েছে, কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি।”
বিএনপি নেতারা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “একটি দল বিএনপিকে বিতর্কিত করতে গুজব ছড়াচ্ছে।” তারেক রহমানও স্পষ্টভাবে বলেছেন, “বিএনপি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, এটাই বিএনপির অন্যান্য দলের সঙ্গে পার্থক্য।”
একটি সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করেন, দেশ পরিবর্তনের জন্য চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও ঘুষ বন্ধ করা জরুরি। এনসিপি চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় এবং নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এটি ব্যবহার করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
চাঁদাবাজি ইস্যুতে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো। বিএনপিও দাবি করছে, তারা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে একের পর এক অভিযোগ ও সামাজিক মাধ্যমে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের কারণে দলের অভ্যন্তরেও অস্বস্তি রয়েছে। নির্বাচনের মাঠে এই ইস্যু কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।