ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত উত্থান ভারতের জন্য তৃতীয় বিশ্বের (গ্লোবাল সাউথ) নেতৃত্ব পাওয়ার প্রচেষ্টায় বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
তিনি মনে করেন, আফ্রিকা ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে এবং ভারতকে এই সম্ভাবনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
রবিবার (১৬ মার্চ) দিল্লিতে চতুর্থ বিপিন রাওয়াত স্মারক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতের অবস্থান ও চ্যালেঞ্জ
দ্বিবেদী বলেন, জনসংখ্যা, গণতন্ত্র, ভূকৌশলগত গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ভারত এখনও বৈশ্বিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও প্রতিযোগিতা ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ব্রিকস (BRICS) জোটও নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষত মার্কিন ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার প্রয়াসে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির ফলে। এ কারণে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (SCO) কার্যক্রমের ওপর গভীর নজর রাখা প্রয়োজন।
নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশল
ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল সম্পর্কে সেনাপ্রধান বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা শুধু যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে না, বরং এটি যুদ্ধ প্রতিরোধের কৌশল হিসেবেও কাজ করে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বেসামরিক ও সামরিক খাতের সমন্বয়, আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প এবং নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একটি কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল উপাদান।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বর্তমানে প্রতিরোধ শক্তির নতুন মুদ্রা হয়ে উঠেছে, যেখানে তথ্য (ডেটা) নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গ্লোবাল সাউথ ও কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতকে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা এবং বিশ্বজুড়ে ভারতীয় প্রবাসীদের মানবিক কাজে যুক্ত করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে অনেক দেশ বাস্তববাদ ও আদর্শবাদের মধ্যে নতুন সমন্বয় গড়ে তুলছে। অনেক দেশ এখন কৌশলগত কারণে ‘আংশিক বন্ধুত্ব’ বা ‘ফ্রেন্ডস বাই কমপালসন’ গড়ে তুলছে।
বিশ্ব নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
দ্বিবেদী বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে, যার মধ্যে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশও রয়েছে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার যুদ্ধ ও আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
সেনাপ্রধান দ্বিবেদী জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে ভারতকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে।
আরইউএস